শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সাবেক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাবীবুর রহমান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা এ দাবি জানান।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থীর স্মরণসভায় শিক্ষক, অগ্রজ, অনুজ, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকায় ফুটপাতে আহত অবস্থায় পড়েছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান।
স্মরণসভায় হাবীবের দুই বছরের ছেলেকে দেখে সাংবাদিকতা বিভাগের অগ্রজ প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন বলেন, “আমি বসে বসে ছেলেটিকে দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম।
“ও আসলে কী হারালো,ও কিছুতেই বুঝতেই পারছে না। আমি মধ্যবয়সে এসে আমার বাবাকে হারিয়েছে। আমি বুঝি, বাবা হারানোর বেদনা কতটা কষ্টের।”
হাবীব চলে গেলেও তার ‘জাদুকরি মুখ’ চোখে ভাসে জানিয়ে তিনি বলেন, “হাবীবের চলে যাওয়াটা শুধু আমাদের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ওর পরিবারের।”
সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ বলেন,
“ও বরাবরই বিনয়ী ছিল। তার হাসিমাখা মুখটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে মুগ্ধ করত।”
টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, “অনেকে এটা দুর্ঘটনা কি-না সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অনেকে আবার দুর্ঘটনা বলছে।
“যারা এটাকে দুর্ঘটনা বলছে, এই কনক্লুশনে কীভাবে তারা এত তাড়াতাড়ি গেছে। আমি চাই, একটা সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যতদূর জানি, তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের ফল বের হোক।”
বেগুনবাড়ি এলাকায় হাবীবকে যেখানে আহত অবস্থায় পাওয়া যায় সেখানকার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, ক্যামেরাগুলো নষ্ট ছিল। ফলে ওই সময় কী ঘটেছিল তা এখনও জানা যায়নি।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কাবেরী গায়েন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমাকে একা একা রাতে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছিল হাবীব। তখন আমি বলেছিলাম, তোমরা থাকতে আমার ভয় কী?”
একই বিভাগ থেকে পাশ করা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, “ডিআরইউর পক্ষ থেকে আমি প্রথম দিনই বলেছি, আপাত দৃষ্টিতে এটি সড়ক দুর্ঘটনা মনে হয়েছে।…
হাবীবের বন্ধু সাংবাদকি আলী আসিফ শাওন বলেন, “আমারও দাবি, হাতিরঝিলের ঘটনার তদন্ত চাই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, এই ঘটনার তদন্ত হোক।”
হাবীবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন হাবীবের হলের রুমমেট ও শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন ইসলাম।
“সড়ক দুর্ঘটনার পর হাবীবের কেবল মুখেই আঘাতের চিহ্ন। আসলেই কি এটা দুর্ঘটনা? এটা যদি দুর্ঘটনা হয়, আমাদের কোনো কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি হত্যাকাণ্ড হয়, তাহলে সেটার উদঘাটন হওয়া জরুরি।”
অপরাধ সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে হাবীবের বন্ধু সাংবাদিক ইকবাল মাহমুদ বলেন, “এটাকে দুর্ঘটনা মানতে আমার পেশাগত অভিজ্ঞতা সায় দেয় না। এটা উদঘাটনের দাবি করছি।”
সহপাঠী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক সোলাইমান নিলয় বলেন,“হাবীব যদি আসলেই দুর্ঘটনার শিকার না হয়, যদি তার মৃত্যুর অন্য কোনো কারণ থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাব যে, প্রকৃত অপরাধীকে দ্রুত খুঁজে বের করুন।”
হাবীবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ বিষয়ক উপদপ্তর সম্পাদক ছিলেন। স্মরণসভায় হাবীবের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেন তার রাজনৈতিক সতীর্থরা।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আমরা একটি ভিডিও দেখেছি। এটা দুর্ঘটনা হোক, আর যাই হোক, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। ছাত্রলীগ পরিবার সব সময় হাবীব ভাইয়ের পরিবারের পাশে থাকব।”
ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, “বন্ধুদের মাঝে ঝামেলা হলে মিটমাট করত সে। হাবীবের বাচ্চার পাশে থাকতে চাই। হাবীব যেন উপরে বসে কষ্ট না পায়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন প্রিন্স বলেন, “হাবীব ভাইয়ের মৃত্যু যদি নাশকতা হয়, তাহলে সেই নাশকতাকারী যত শক্তিশালীই হোক, সেটাকে উপড়ে ফেলতে হবে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে হাবীবের সহপাঠীদের আয়াজিত অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বক্তব্য দেন।
হাবীবের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীদের প্রতি স্মরণসভায় আহ্বান জানান তার বাবা মো. পেয়ারা এবং স্ত্রী হাসি আক্তার রিমি।
আরও পড়ুন