শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছয় বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার ঘোষণা এলেও কেরানীগঞ্জের ১৮৮ একর জমিতে এখনও সীমানপ্রাচীর নির্মাণের কাজই শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
Published : 25 Jan 2022, 10:29 PM
এরইমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন দফা, কাজের ধীরগতিতে হতাশা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর আবাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। বেদখল হল উদ্ধারে জটিলতা থাকায় এবং বর্তমান ক্যাম্পাসে জায়গা না থাকায় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের ঘোষণা আসে সে সময়।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।
অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে নতুন ক্যাম্পাসের নকশাও দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ওই বছরের জুলাইয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার চেক পায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এ সপ্তাহের শুরুতে তেঘরিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, জমির পূর্ব দিকে সীমানাপ্রাচীর তৈরির প্রাথমিক কাজ চলছে, কেরানীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের দিকের সীমানায় চলছে শিক্ষার্থীদের জন্য সাময়িক মাঠ তৈরির কাজ এবং তুলে নেওয়া হচ্ছে জমির আগের মালিকদের সীমানাপ্রাচীর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট আর একটা ছয়তলা অফিস বিল্ডিং করব। বিশ্ববিদ্যালয় করতে যা লাগে তার সব ওখানে হবে।
“সীমানাপ্রাচীরের কাজ চলছে। চারদিকে সীমানা বরাবর লেক হবে। বাকি কাজগুলোর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি আমরা। এগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়া। টেন্ডার করে, টেন্ডার পেয়ে …. সময় লাগবে। আগেই বলা যাচ্ছে না।”
তিনি জানান, কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফায় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণ হিসেবে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “জমি অধিগ্রহণে সময় লাগে। জমি অধিগ্রহণ না হলে তো কাজ করতে পারি না। মহামারীর কারণে অনেক সময় চলে গেছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অধিগ্রহণে সময়ক্ষেপণ হয়নি। সময়ের মধ্যেই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন তো এটা ২২ সাল।”
আরও ১১ একর জমি বুঝে পাওয়ার অপেক্ষা
নতুন ক্যাম্পাসের ২০০ একর জমির মধ্যে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি বুঝিয়ে দেয় ঢাকার জেলা প্রশাসন। হস্তান্তর বাকি রয়েছে ১১ দশমিক ৪০ একর জমি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন “বাকিটা হচ্ছে, প্রস্তাবাধীন আছে। কিছু অংশে বাড়িঘর ছিল অনেক বেশি। এ কারণে তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই সে অংশ বাদ দিয়েছে।”
নতুন ক্যাম্পাসের উদ্যোগে থমকে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’
কেরানীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকলেও এ প্রকল্পের তোড়জোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ আটকে গেছে।
২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশকপূর্তির অনুষ্ঠানে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের কথা জানিয়েছিলেন।
ওই ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে’র অধীনে কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের জন্য ১০ তলা হল ও ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান ভবন ভেঙে ২০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরিতে ১২৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও হল নির্মাণে ৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১০ তলা হল নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে, ‘শিগগিরই’ তা একনেকে পাঠানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন ক্যাম্পাসের অনুমোদন আসার পর আর এগুলো আগায়নি।”
শিক্ষার্থীদের হতাশা
প্রতিষ্ঠার দেড় দশক পরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলছেন।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে আসার সময় থেকে শুনছি নদীর ওই পাড়ে ক্যাম্পাস হবে। আমাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো খবর নেই। ভিসি যাচ্ছে, আসছে- কিন্তু আমাদের সমস্যার কোনো গুরুত্ব নেই। দ্রুত আবাসিক সংকট দূর করা দরকার।”
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তাদের পরিবারের অবস্থা আহামরি ভালো না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যা নিয়ে তামাশা করছে।
“কেবল আন্দোলন হলে একটু নড়েচড়ে। এতদিনে একটা দেয়াল তুলতে পারে নাই নতুন ক্যাম্পাসে, তাহলে তারা দায়িত্বে আছে কেন? এভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।”