সোমবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়।
“বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
“একটি বিশেষ মহল এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের কয়েকশ শিক্ষার্থী।
এসময় তারা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগসহ হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবি জানায়।
১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রশাসনের উপস্থিতিতে’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।
পরদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ১৭ জানুয়ারি দুপুরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি তোলেন।
ঢাবি শিক্ষক সমিতিরি বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্দোলন চলাকালে পুলিশের বলপ্রয়োগের মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে উক্ত হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন।
“আন্দোলনকে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মূলদাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের এই রূপান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের। যা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।”
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
পরে ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা সোমবার ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিনকে ২০১৭ সালে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
গত বছরের অগাস্টে দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিনি। তার ছয় মাস না পেরোতেই এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রবল চাপে রয়েছেন অর্থনীতির এই শিক্ষক।
আমরণ অনশন চলার মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক এবং শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাক্সিক্ষত মাত্রা যুক্ত করেছে।
“শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। ”
বিবৃতি বলা হয়, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই।
আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, “পুলিশি হামলায় কারও কোনো উষ্কানি রয়েছে কি না তাও তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
আরও পড়ুন