শাবি ভিসিকে ‘সোমবারের মধ্যে’ পদত্যাগ করার আহ্বান

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে উপাচার্য (ভিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ‘সোমবারের মধ্যেই’ পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 11:26 AM
Updated : 24 Jan 2022, 11:48 AM

সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের ‘প্রতীকী অনশন’ কর্মসূচি থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’ স্লোগান নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অন্তত ২০ জন শিক্ষক সংহতি জানিয়ে ‘প্রতীকী অনশন’ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মসুচিতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সম্মানবোধ থাকলে আজকের মধ্যেই আপনি পদত্যাগ করেন। আপনার জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।

“আপনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনের আন্দোলনকে পুঁজি করে উপাচার্য হয়েছেন। অনেক অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে। এসমস্ত বিষয় নিয়ে নিজেকে আর না পচিয়ে আপনি অবিলম্বে আজকের মধ্যেই পদত্যাগ করুন। প্রাণ বাঁচুক, বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচুক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অব্যাহত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক।”

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার তাদের এ কর্মসূচি ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংহতি জানালেও শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনগুলোর ‘নীরব’ ভূমিকার সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনশন করছে।

তারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করলেও এটা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মেরামত করার জন্য, বড় ধরনের পরিবর্তনের লড়াইকে শক্তিশালী করছে। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সংহতি জানাই।

“কিন্তু শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনগুলোর ভূমিকা লজ্জাজনক। তারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করার চাইতে যেভাবে সরকারের বা প্রশাসনের স্বার্থ রক্ষার্থে নিয়োজিত আছে, তাতে শিক্ষকদের মর্যাদা সংকটে ফেলেছে।

“আমরা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের প্রতি আহ্বান জানাই, শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত।”

বর্তমানে ‘মেরুণ্ডহীন ব্যক্তিদের’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা বিশেষ সুবিধা পান বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক।

“আজকে পরিস্থিতিটা এমন, উপাচার্য নিয়োগের জন্য তাদের মেধা, শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার জন্য  তাদের ভূমিকা বিচার্য বিষয় নয়। বিচার্য বিষয় হচ্ছে তারা কতটা আনুগত্য দেখাতে পারবেন সরকারের প্রতি।”

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটাই আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মূল কারণ।

“এখানে আসলে তার একাডেমিক যোগ্যতার চেয়ে, গবেষণার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় তার মেরুদণ্ড কত নরম। নরম মেরুদণ্ডের শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

“সঙ্গত কারণে তারা অমানবিক, বিবেকহীন হন। এই যে ক্ষমতার সঙ্গে তাদের যে সখ্যতা তৈরি হয়, এর মধ্য দিয়ে উপাচার্য আর উপাচার্য থাকেন না। তারা সরকারের একটি বিস্তৃত অংশ হয়ে দাঁড়ায়।”

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।

পরে গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা অনশনে বসেন।

প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অন্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, একই বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের কাজী মারুফুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, নৃবিজ্ঞান বিভগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ফাহিরনা দূর্রাত, ব্যবস্থাপনা বিভাগের তাহনিমা খানম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।

আরও পড়ুন