শাবির আন্দোলনে ‘প্রভাব আছে কি না’ দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পিছনে ‘কোনো প্রভাব আছে কি না’ তা সাংবাদিকদের খতিয়ে দেখতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2022, 06:58 PM
Updated : 22 Jan 2022, 06:58 PM

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশনের মধ্যে শনিবার রাতে ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল।

বৈঠকটি কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের দীপু মনি জানান, শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

এর আগে শুক্রবার শিক্ষার্থীদের আলোচনায় আসার আহবান জানিয়েছিলেন দীপু মনি। শুরুতে সাড়া দিলেও পরে আর আলোচনায় আসতে রাজি হননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা এত উৎসাহে রাজি ছিল, যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় তারা কথা বলতে চায়। বলেছিল আগামীকাল (শনিবার) নয়, আজই (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বসতে চাই।

“সে মতটা কী কারণে পাল্টে গেল? খুঁজে দেখেন। কাদের কারণে বা কোনো প্রভাব আছে কিনা? সেটা আপনারা খতিয়ে দেখতে পারেন।”

পারিবারিক কারণে শাবিতে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না হলেও প্রয়োজনে প্রতিনিধি পাঠানো হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখনই চাইবে তখনই আলোচনা হবে।”

শিক্ষার্থীরা এর আগে শিক্ষামন্ত্রীকে ভার্চুয়ালি আলোচনার আহবান জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার কাছে মনে হল, যে রকমের ইস্যু, এখানে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই মিলে কথা বলতে পারলে অনেক ভাল হয়। সব সময় ভার্চুয়ালি অতো ভাল নাও হতে পারে।”

বৈঠকে শিক্ষকরা কোনো পরামর্শ দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবারই একটা পরামর্শ এই অবস্থা থেকে বেরুতে হবে। কারণ আমরা সবাই চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক। শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক, অস্থিতিশীল যে না থাকে।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।

এসময় তাদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্রুত ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া।

পরে গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

এরপর ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।

ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত অনশনে শিক্ষার্থীরা।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে আর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা শনিবার চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। অনশনকালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

শনিবার একই দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে কাফনের কাপড় পড়ে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা শুরুতে যে দাবিগুলো জানিয়েছিলেন তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নিয়েছে।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের দাবি এখন ভিন্ন জায়গায়। সেই দাবি যৌক্তিক কিনা, গ্রহণযোগ্য কিনা- সেটাও তো আলোচনা করতে হবে।”

উপাচায অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ভালভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “চার বছর তিনি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে তাকে দ্বিতীয়বার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ৭ দিন তিনি কোনো ভুল করেছেন কিনা তাও আলোচনার বিষয়। আলোচনায় সমাধানে আসতে পারব।”

অনশনরতদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাইছি দ্রুততার সঙ্গে তারা যেন অনশন সমাপ্ত করে।

“আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এখন অনশন করছেন। এটি আমাদের কারোরই ভাল লাগে না। আমরা চাই তারা অনশন প্রত্যাহার করে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক বা অনশনরত অবস্থায়ও তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। যে কোনো সমস্যার সমাধান একমাত্র আলোচনা।”

এসময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ্ ও সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শাবিপ্রবি শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলে ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন রাশেদ তালুকদার, অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস অনুষদের ডিন আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন খায়রুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: