ঢাবির টিএসসিতে কাওয়ালির আসরে হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কাওয়ালি গানের এক অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 03:13 PM
Updated : 12 Jan 2022, 05:29 PM

বুধবার সন্ধ্যার এই হামলায় আমার সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদক জালাল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিয়া তাসনিম রাফা, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম মুনাসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছে।

এই হামলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে আয়োজকরা। তবে ছাত্রলীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সন্ধ্যা ৬টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাওয়ালি ব্যান্ড ‘সিলসিলা’ এবং একদল শিক্ষার্থীর যৌথ উদ্যোগে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা রাত ৯টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল।

তাতে মুর্শিদি-ভাণ্ডারী ধারার সংগীত শিল্পী শেখ ফাহিম ফয়সাল, মূল কাওয়াল দল হিসেবে ঢাকার বিখ্যাত কাওয়াল নাদিম এহতেশাম রেজা খাঁ ও তার দল এবং ‘সিলসিলা’ ব্যান্ডের লুৎফর রহমান ও খালিদ হাসান আবিদের গান গাওয়ার কথা ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালায়, চেয়ার ভাংচুর করে মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেয়। সেখানে ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নাজির আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, মাস্টারদা  সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসাইন শোভন, ছাত্রলীগকর্মী রনি হোক, ফরিদ জামান,  তানজির আরাফাত তুষারসহ ছাত্রলীগের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন।

হামলাকারীদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী বলে পরিচিত।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন রাকিব তনয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যায় আমরা অনুষ্ঠানে মাইক সেট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন একদল ছেলে এসে অনুষ্ঠানে অতর্কিত হামলা চালায়। মঞ্চ ভাংচুর, চেয়ার দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর, শিক্ষার্থীদের কিল-ঘুষি এবং আমাদের আয়োজকদের ধাওয়া করে টিএসসি থেকে বের করে দেওয়া হয়।”

অনুষ্ঠানের আরেক উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর হুজায়ফা আল মামদূহ বলেন, “সকালে যখন আমরা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন আমাদের বলা হয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সেখানে অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছে। তখন সাদ্দাম হোসেনকে ফোন দিলে প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে আমাদের মাইক ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

“সন্ধ্যার দিকে আমরা জানতে পারি ছাত্রলীগ আমাদের উপর হামলা করবে এবং তারা মধুর ক্যান্টিনে লোক জড়ো করছে। পরে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা গায়কদের সরিয়ে নিই। এরপরই ছাত্রলীগ এসে অতর্কিত হামলা চালায়।”

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান বলেন, “ছাত্রলীগের এই হামলায় অন্তত ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।”

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের হামলার করার প্রশ্নই আসে না। আমরা জানতে পেরেছি, তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগের নামে এ ধরনের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পরপরই সেখানে আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম এবং সহকারী প্রক্টর গিয়েছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়ে সবকিছু জানার চেষ্টা করেছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেখানে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে গিয়ে একদল শিক্ষার্থী কাওয়ালি গান গেয়ে প্রতিবাদ জানায়।