‘একীভূত ভ্রমণ-২০২১’ স্লোগান নিয়ে শুক্র ও শনিবার এই ভ্রমণে ১৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বৃহন্নলার শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
দুদিনব্যাপী এই ভ্রমণের প্রথম দিন সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির এবং দ্বিতীয় দিন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ও মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক ঘুরে দেখা হয়। ভ্রমণের পাশাপাশি সেখানে অসহায় মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে বৃহন্নলা।
এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভ্রমণ স্পটে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয় সচেতনতা তৈরির জন্য।
আয়োজকরা জানান, আরভি ফাউন্ডেশন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী আর্থিক সহযোগিতা করেছেন এই আনন্দ ভ্রমণের জন্য।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা তৃতীয়বারের মত বৃহন্নলাদের সঙ্গে ইনক্লুসিভ ট্যুর করলাম। এর আগে আমরা সিলেট ও কক্সবাজারে তাদের নিয়ে ব্যতিক্রমী ভ্রমণ করেছি।
“আপনারা জানেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আমাদের সমাজে অবহেলিত এবং বঞ্চিত একটি শ্রেণি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তাদের এড়িয়ে চলে, তাদের সম্পর্কে কিছু বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করে, যা তাদের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে। এই বদ্ধমূল ধারণা ভাঙার জন্যই মূলত এই একীভূত ভ্রমণের আয়োজন।”
একীভূত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় বৃহন্নলার।
ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও সচেতনতা তৈরির জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে এ সংগঠন। সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম।
“এটা শুধু নিছক আনন্দ ভ্রমণ নয়, এই ভ্রমণে আমরা মানুষের মাঝে বৃহন্নলাদের নিয়ে ইতিবাচক নানা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
এই ভ্রমণে মুনমুন নামের একজন ট্রান্সজেন্ডার প্রথমবারের মতো ট্যুর ভ্লগার হিসেবে ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করেছেন।
মুনমুন বলেন, “ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে ভ্লগিং করার সুযোগ, সত্যিই আমার কাছে গর্বের। ভ্লগিং করার অভিজ্ঞতা আমার তেমন ছিল না। তবে এ নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে এবং আমি শেখার চেষ্টা করছি। একজন ট্রান্সজেন্ডারের চোখ দিয়ে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা আমার স্বপ্ন।”
ভ্রমণে অংশ নেন সচেতন হিজড়া সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও হিজড়া অধিকার কর্মী ইভান আহমেদ কথা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সরকার ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ভোটাধিকার দিয়েছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
ভ্রমণের শুরুতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে একীভূত এই ভ্রমণের উদ্বোধন করা হয়।
সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জিএম আরিফুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন উপস্থিত ছিলেন।
সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, “স্রষ্টার সৃষ্টি সকল জীবই সমান। লিঙ্গভেদে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না। সমাজে যদি এই ধরনের বিভেদ থাকে, সেই জায়গায় আঘাত করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছেন এবং বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতেও যাতে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি রাখা হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সেটি করবে বলে আমরা আশা করি।”