ইতিহাস বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে বিভাগ থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে নেচে-গেয়ে টিএসসিতে আসেন সাবেক একদল শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতিহাস বিভাগের শতবর্ষের অর্জন, পূর্ণতা এবং অপূর্ণতার বিষয়ে এসময় জানতে চাওয়া হয় এই বিভাগের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে ৫০ বছর ধরে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের কাছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই ইতিহাসবিদ জানান, সঠিক ইতিহাস চর্চার লক্ষ্যে সব দেশেই ইতিহাসের পাঠকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলেও এদেশে ইতিহাস ‘নিয়ন্ত্রণে রাখার’ চেষ্টা করা হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পৃথিবীতে যতগুলো বনেদি বিশ্ববিদ্যালয় আছে সবখানে প্রথম যে কয়টি বিভাগ খোলা হয় তার মধ্যে ইতিহাস বিভাগ অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।
“এই নিয়মটা এখনও বিভিন্ন দেশে মানা হয়, তবে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে ইতিহাস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা হয়। এই কারণে ইতিহাস বিভাগ কোথাও খোলা হয় না।”
৪৬ বছর ধরে শিক্ষকতায় জড়িত মুনতাসীর মামুন বলেন, “আমাদেরকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে, কিন্তু পাঠ্য বইতে ইতিহাস বাধ্যতামূলক করে না, করে শরীর চর্চা, ধর্ম চর্চা।”
১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে পরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “ইতিহাস বিভাগ যে জায়গা পৌঁছানো উচিত ছিল, আমার মনে হয় সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।
“প্রধান সীমাবদ্ধতা হচ্ছে- সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস চর্চা যুযোপযোগী করা। বিশ্বের যে ইতিহাস চর্চার ফারাক তার সমানুপাতে অগ্রসর হওয়ার যে দায়িত্ব ছিল সেটা বোধহয় সেইভাবে পালন করতে পারেনি।
“একশ বছর আগে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তার থেকে যে খুব বেশি এগিয়েছি তা আমি বলবো না। রাজা-বাদশার যে ইতিহাস থেকে বেরিয়ে জনইতিহাস চর্চার ব্যাপারে খুব বেশি এগুতে পারিনি।”
শতবর্ষে ইতিহাস বিভাগের অর্জন এবং অপূর্ণতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইতিহাস চর্চার কাজ হচ্ছে, তবে বিশ্বমানে পৌঁছানোর জন্য যে পরিসরে কাজ করা প্রয়োজন, ইতিহাসের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে না।”
১৯৬১ সাল থেকে প্রথমে ছাত্র এবং পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে ইতিহাস বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ইতিহাস বিভাগের সব সময় মেধাবী ছেলে-মেয়েরা ছিল।
“১৯২১ সালে এই বিভাগ চালু হলে তখনও কেবল এই অঞ্চলেই নয়, ভারতবর্ষের ছাত্র-শিক্ষকরা এখানে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের জন্মের পেছনে এই বিভাগের অবদান আছে।
“আমাদের ছাত্র আসাদ আইয়ুব খানের সময় লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিল। ইতিহাসের ছাত্ররা দেশপ্রেম দেখিয়ে, দেশের জন্য কাজ করে চলেছে। ভবিষতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখবে বলে আশা করি।”
ইতিহাসে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের অবদান তুলে ধরে অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, “শহীদ আসাদুজ্জামান, যিনি ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, যার মৃত্যুকে উপলক্ষ করে ৬৯ এর গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল।”
এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনজন শিক্ষক ও তিনজন ছাত্র শহীদ হওয়ার কথা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম সেলিমের আত্মাহুতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এই শিক্ষক।
ইতিহাস বিভাগের শতবর্ষ উদপযাপনের এ আয়োজনে টিএসসি মাঠে গত ১০০ বছর ধরে বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান ও অর্জন বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়া ইতিহাসধর্মী নানা বিষয়ে এই বিভাগের শিক্ষকদের লেখা গ্রন্থ নিয়ে আলাদা আরেকটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এসবের পাশাপাশি ছিল স্মারক প্রদর্শনীও।