বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিশেষ ট্র্যাইবুনালে এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন তারা।
এলমা ছিলেন নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকার বনানীতে স্বামীর বাসায় মঙ্গলবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। কয়েকদিন আগেই কানাডাপ্রবাসী স্বামী ইফতেখার আবেদীন দেশে ফেরেন।
শিক্ষক ও স্বজনরা বলছেন, এলমার শরীরে ‘আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে’। তবে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবিম তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
মানববন্ধনে এলমার ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর কথা তুলে ধরে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।
স্বজনরা জানান, ৫-৬ মাস আগে কানাডাপ্রবাসী ইফতেখারের সঙ্গে এলমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তিনি বনানীতে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তবে স্বামী কানাডাতেই ছিলেন।
এলমার মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই তার স্বামী ইফতেখারকে আটক করে বনানী থানা পুলিশ। এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে ইফতেখার, তার মা শিরিন আমিন ও ইফতেখারের পালক বাবা মো. আমিনকে আসামি করা হয়।
ইফতেখারকে বুধবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান।
নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, “আমি যখন খবর পেয়ে হসপিটালে গেলাম, তখন প্রথমেই তার স্বামীকে দেখে ও তার সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল সে অস্বাভাবিক।
“পরে যখন আমি লাশ দেখলাম, তখন দেখি তার মুখ থেকে শুরু করে সারা শরীরে আঘাতের দাগ। যদি গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার সারা গায়ে আঘাতে দাগ থাকবে কেন?”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনে কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন এলমা। মানববন্ধনে তার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য জানান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা বানু।
নৃত্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লাবণি বন্যা বলেন, “আপুর হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে এসব ঘটনা কোনো দিনও থামবে না।
“আজকে আপু চলে গেছে, কাল হয়তো আমরাও যেতে পারি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সমাজে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি না ভাঙলে এ সমস্যা কোনো দিনও যাবে না।”
এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা চাই এই ঘটনার বিচারের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হোক, যেন পরবর্তীতে আমাদের এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়।”
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া, নৃত্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তামান্না রহমান বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন