পূর্বপুরুষদের পথে হাঁটুন: ঢাবি শিক্ষকদের মোস্তাফা জব্বার

দক্ষতা ও মানসিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকদের ‘পূর্বপুরুষদের পথে’ চলার পরামর্শ দিয়েছেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2021, 05:20 PM
Updated : 2 Dec 2021, 05:20 PM

তিনি বলেছেন, “আপনারা পূর্বপুরুষদের পথ ধরেই হাঁটবেন। তাদের পথ অনুসরণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর রত্ন হিসেবেই গড়ে তুলতে পারবেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোনোদিন অন্যায়ের কাছে ‘মাথা নত করেনি’।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সন্তানের মত শিক্ষার্থীদের বিপদে আগলে রেখেছেন।

“আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ঐতিহ্য এখনও হারাননি। তাদের পূর্বপুরুষরা যে দক্ষতা ও মানসিকতা নিয়ে আমাদেরকে মানুষ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার শিক্ষকরাও সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখছেন। "

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে ‘চাকার’ প্রয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই ভূমিকা পালন করছে। দেশে এমন কোনো খাত নেই, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল আলোচনা সভায় বলেন, কোনো ইমারত, কোনো বিশেষ স্থাপনা বা সপ্তম আশ্চর্য়ের কোনো বিষয়ের জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বাবাসী মনে করে না।

“বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানুষ চেনে ছাত্র-জনতার সংগ্রামী চেতনার জন্য। আমরা যখন বিশ্ব ফোরামে বসি, তারা বার বার উচ্চারণ করেন, বাংলাদেশের মানুষ অসম্ভব রকম রেজিলিয়েন্ট।

“মুক্তিযুদ্ধ, আমরা সেই সংগ্রামের অধিকারী, বিরাট ঐতিহ্যের অধিকারী। আমরা যেন সু-উত্তরাধিকারীর মত আচরণ করি। সু-উত্তরাধিকারীরা সেটাকে আরও সমৃদ্ধ করে। … পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে না। আমরা যেন সেটা থেকে বিরত থাকি।”

সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা এখনও সর্বজনের সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। যার কারণে আমরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।”

তিনি বলেন, এ সমাজে এখনও নারী-পুরুষের বিভেদ আছে, জাতি ধর্ম হিসেবে বিভেদ আছে, বৈষম্য আছে।

“সর্বজনের স্বীকৃতি দেয়- এমন একটা সামাজিক-সংস্কৃতিকে গড়ে তুলতে আমাদের উচিত মানবাধিকারকে সম্মান করা, আইনের শাসন মেনে চলা।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমিরেটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, দেশের জন্য এটা তখন আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিল। তখন শিক্ষার হার ১ শতাংশেরও নিচে ছিল।”

সেই জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ৭৫ হাজার গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে, যারা সেসময় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি চাকরি ও অন্যন্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়েই দেশে একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ গড়েেউঠেছে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতে যেমন করে জাতিকে পথ দেখিয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতেও জাতিকে পথ দেখাবে।”
অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে  সদ্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভা শেষ হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়।