ঢাবির হলে ২ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলে দুই শিক্ষার্থীকে রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2021, 01:35 PM
Updated : 8 Nov 2021, 02:00 PM

ওই দুই শিক্ষার্থী বলেছেন, তাদের মারধর ও হুমকি দেওয়ার পর হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের একজন দাবি করেছেন, কোনো নির্যাতন তারা চালাননি, তবে সিনিয়র হিসেবে ‘শাসন’ করেছিলেন।

‘নির্যাতিত’ দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রক্টর।

অভিযোগকারী, নির্যাতনকারী চার শিক্ষার্থীই ছাত্রলীগে যুক্ত। হলের ছাত্রলীগ নেতা ইমরান সাগরের সমর্থক তারা। সাগর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তরিকুল ইসলাম এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের মো. আরিফুল ইসলাম।

তাদের অভিযোগ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ সিফাত এবং আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান অর্পণের বিরুদ্ধে।

সিফাত ও অর্পণ এর আগেও শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগে শাস্তি পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ছয় মাস শাস্তি ভোগ করে তারা পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেন।

তরিকুল ও আরিফুলের অভিযোগ, রোববার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে সিফাত ও অর্পণ তাদেরকে হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে নিয়ে দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালানোর পর হল থেকে বের করে দেন।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর আলাদা আলাদা অভিযোগ জমা দেন তরিকুল ও আরিফুল।

তরিকুল বলেন, “রাত ২টা ৫০ মিনিটে আমাদেরকে তাদের (সিফাত-অর্পণ) রুমে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে আরও ৫-৬ জনকে দেখতে পাই। তারপর তারা, বিশেষ করে সিফাত এবং অর্পণ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।

“এক পর্যায়ে সিফাত আমাকে রড দিয়ে মারতে আসে। একজন রড ধরে ফেললে সিফাত আমাকে দেয়ালের উপর সজোরে আঘাত করে, তাতে আমার পায়ে এবং মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। তারপর জোর করে আমার ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং অনেকক্ষণ ধরে আমার মোবাইল চেক করে। এরপর সিফাত আমাকে বলে- ‘আমি মারলে মাথায় মারি, তোদের মেরে হলের ট্যাঙ্কিতে ফেলে রাখলেও আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না’।”

আরিফুল বলেন, “রুমে নিয়ে আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং রড-স্ট্যাম্প নিয়ে মারতে তেড়ে আসে। এক পর্যায়ে আমার এবং তরিকুলের গলা চেপে ধরে সিফাত উল্লাহ এবং মাহমুদ অর্পণ। আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় আমি অসুস্থ হয়ে সেখানেই শুয়ে পড়ি।

“দেড় ঘণ্টা পরে সকাল ৪টা নাগাদ আমাদেরকে ওই রুম থেকে বের করে দেয় এবং আজ দুপুরের মধ্যে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। হল থেকে বের হয়ে না গেলে মেরে টাংকির উপর ফেলে রাখবে বলে সিফাত উল্লাহ হুমকি দেয়। সেই থেকে আমরা হলের বাইরে অবস্থান করছি এবং জীবনের শঙ্কা বোধ করছি।”

আরিফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিফাত এবং অর্পণকে সবাই চেনে ওরা কেমন, এর আগেও দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিল। গতকাল রাতে যদি আমরা একজন হতাম, বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো আরও একটি ঘটনা ঘটত।”

মাহমুদুর রহমান অর্পণ (বাঁয়ে) ও সিফাত উল্লাহ সিফাত, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টা হলো আমরা একই গ্রুপে ইমরান সাগরের রাজনীতি করি। গতকাল রাতে ওরা দুজন গেস্টরুমে এক জুনিয়রকে হল থেকে বের করে দেওয়ার থ্রেট দিয়েছিল। ঘটনাটি শুনে তাদেরকে খোঁজার চেষ্টা করি। রাত আড়াইটায় যখন হলে ফেরে, তখন তাদের রুমে ডেকে আনা হয়। ঘুমিয়ে থাকলে তাদেরকে তখন ডাকতাম না।

“সিনিয়র হিসেবে আমরা তাদের দুজনকে শাসন করেছি। এক পর্যায়ে তারা উদ্ধত আচরণ করেছে বলে বকাবকি করেছি। তবে শারীরিক নির্যাতন বা হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা অসত্য।”

আগের বহিষ্কারের প্রসঙ্গে সিফাত বলেন, “তখন একটা অকারেন্স হয়েছিল, সেজন্য আমরা ছয় মাস শাস্তি ভোগ করেছি। কিন্তু এবার তো এটা আমাদের কোনো অন্যায় না। ছোট ভাই হিসেবে আমরা কি তাদেরকে কিছু বলতেও পারব না?”

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান সাগর বলেন, “আমি সকালে ঘটনাটা জেনেছি। ওরা সবাই আমার সাথে রাজনীতি করে। কিন্তু এটা রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়। এটা ওদের ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা ছিল।

“আমি প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন, অভিযোগ সত্য হলে প্রশাসনিক কাঠামোতে বিচার করবেন। কেউ ফিজিক্যালি অ্যাসল্ট করলে আমিও বিচার চাই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি সেটা হল প্রভোস্টের কাছে পাঠিয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেলেও তিনি ধরেননি, এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

পরে সোমবার বিকালে হল অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোতালেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার দুপুরে হল থেকে চলে গেছেন। শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টা আমরা হাউজ টিউটরদের মাধ্যমে জেনেছি। অভিযোগ পেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”