সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর সেমিনার লাইব্রেরিও খোলা হয়েছে।
প্রথম ধাপে শুধু স্নাতক চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে এসে পড়ার সুযোগ পাবেন। তবে তাদের অন্তত এক ডোজ কোভিড টিকা নেওয়া থাকতে হবে।
তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকাল ১০ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র এবং টিকার কার্ড দেখানো শর্তে শিক্ষর্থীদের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। শুক্রবার ও শনিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে গ্রন্থাগার।
বাইরে থেকে নিয়ে আসা বই ও ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু গ্রন্থাগারের রেফারেন্স বই ব্যবহার করার শর্ত দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
সেখানে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের বাইরেও চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদেরও জোর করে ঢুকতে দেখা যায়।
মহামারীকালে চাকরি প্রত্যাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দায় নিজেরা চেয়ার-টেবিল পেতে পড়ালেখা করেছেন। গ্রন্থাগার খোলার পর তারাও হট্টগোল করে ভেতরে ঢুকে যান।
পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী ও প্রধান গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন মুন্সী বিজ্ঞান গ্রন্থাগার পরিদর্শন করে চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের মহামারীকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত মেনে চলার অনুরোধ জানান।
“চাকরি প্রত্যাশীদের সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত। আমরা গ্রন্থাগারগুলো পরিদর্শন করেছি এবং শিক্ষার্থীদের মহামারীকালীন বিধি-নিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছি।”
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। পরে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলেও অধিকাংশ বিভাগ-ইনস্টিটিউ চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারেনি।
ফলে শিক্ষার্থীদের একাধিক সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা আটকে আছে। সেশনজট রোধে গত কয়েক মাস ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৫ অক্টোবর থেকে খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এলে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান শুরু হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুহসীন মিয়া বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক। হল বন্ধ , ক্যাম্পাস বন্ধ, যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবাও বন্ধ। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে কীভাবে আসবে?
“বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরে জন্য পরবিহন সেবা চালু রাখা হয়েছে, অথচ শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আসতে। তাহলে আর এত স্বাস্থ্যবিধির শর্ত দিয়ে কী হবে? অন্তত পরিবহন সেবাটা চালু করলেও লাইব্রেরিতে যাওয়া আমাদের জন্য সহজ হত।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুর ইসলাম বলেন, “বাইরে থেকে বই নিয়ে না এলে পড়ব কী? একটি বিষয়ে একাধিক বই ও নোট খাতা নিয়েই পড়তে বসতে হয়। সেখানে গ্রন্থাগারের রেফারেন্স বই দিয়ে তো আর ওভাবে পড়া যাবে না। আমি বুঝতে পারছি না, বাইরে থেকে বই নিয়ে গেল সমস্যা কোথায়?”
“বই নিয়ে সধারণত চাকরিপ্রত্যাশীরা পড়তে আসে । এটা আমাদের পুরনো কালচাল। তারা পড়ালেখা করবে ঠিক আছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে হবে।”
গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“ আগামীকাল থেকে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সীমিত আকারে গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা চালু করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ( প্রশাসন) ও ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি।”