আইয়ুব আমলের মতই ‘শিক্ষা সংকোচন’ হচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের আমলের শিক্ষা সংকোচন নীতির চেয়ে বর্তমানে তা কোনো অংশে ‘কম নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2021, 06:53 PM
Updated : 17 Sept 2021, 06:53 PM

শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের আমলে কুখ্যাত ‘শরীফ কমিশন’ প্রস্তাবিত শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের ডাকা হরতালে পুশিলের দফায় দফায় লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস ও গুলিবর্ষণে শহীদ হন গোলাম মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ।

ছাত্রসমাজ দিনটিকে শিক্ষার জন্য সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে প্রতি বছর মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে।

শিক্ষা দিবসের এ সমাবেশ থেকে সর্বজনীন গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার লড়াইয়ের চেতনাকে শানিত করার আহবান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, “আমরা আইয়ুব খানের স্বৈরাশাসন দেখেছি। ৬২ সালে শিক্ষার অধিকার নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, কিন্তু আমরা এখনও শিক্ষার সেই অধিকার ফিরে পাইনি।

“তার সময়ে যত বেশি শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছিল, বর্তমানে তা কোনো অংশে কম নয়।"

সরকার শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “পৃথিবীর বহু দেশে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও বাংলাদেশের মত এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল না।

“পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখার চেষ্টা করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারের এক নীতিনির্ধারক আশঙ্কা করেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ষড়যন্ত্র হতে পারে। একথা দ্বারা বোঝা যায়, সরকার তারুণ্যের শক্তিকে ভয় পায়।

“সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী প্রচারণা চালায় কিংবা দেশের সম্পদ লুট করতে যারা পাঁয়তারা করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করার চেষ্ঠা চালায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনচেতা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জেগে উঠবে। এ ভয়ে সরকার যত বেশিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যায়, তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।”

বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “আমাদের দেশ বহু শিক্ষানীতি দেখেছে। পরাধীন দেশে মজিদ খান শিক্ষানীতি, স্বাধীন দেশে শরীফ খান শিক্ষানীতি, কুদরত-ই-খুদা শিক্ষানীতি, শামসুল হক শিক্ষানীতি প্রভৃতি।

“এই নীতিগুলো নামে ভিন্ন হলেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এক। আর তা হল, সকল মানুষের জন্য শিক্ষা নয়। শিক্ষা পাবে শুধু মুষ্টিমেয় সম্পদশালী লোকজন।”

তিনি বলেন, “সকল মানুষ শিক্ষা পেলে তাদের লুটপাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে, অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়াবে। তাই তাদের শিক্ষানীতি হল শিক্ষাকে সংকুচিত করার নীতি।

“তার বিরুদ্ধেই যুগে যুগে এই দেশের ছাত্র সমাজ লড়াই করেছে সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার একই পদ্ধতির শিক্ষার অধিকারের জন্য।”

বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “আজ গোটা দেশ শাসক শ্রেণির কাছে জিম্মি। শিক্ষার্থীরাও তার বাইরে নয়। লুটেরা ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে।”

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি আল কাদেরী জয়, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।