শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা নিল ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার  প্রায় দেড় বছর পর সশরীরে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2021, 06:21 PM
Updated : 2 Sept 2021, 06:21 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রথম সেমিস্টার এবং দুপুর ২টা থেকে স্নাতক শেষবর্ষের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা হয়।

মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় তিন ঘণ্টার বদলে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে দেড় ঘণ্টায় এ পরীক্ষা নেওয়া হয়।

পরীক্ষার হলে দুই বর্ষেরই শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধির মেনে স্নাতকোত্তরের ৫৩ শিক্ষার্থীকে আলাদা দুটো কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে দুপুরে স্নাতক শেষবর্ষের ৬৬ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা হয়। 

পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা  বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ হল পরিদর্শন করেন।

পরীক্ষা শেষে স্নাতক সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষার্থী গাজী হীরক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেশনজট রোধে আমাদের বিভাগ সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, এটা খুবই  ভালো একটি সিদ্ধান্ত। অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে  আমাদের অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

"অনলাইনে ক্লাস ও মিডটার্ম দিতে গিয়ে আমরা অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। কারণ আমাদের অনেকের ভালো মোবাইল বা ডিভাইস নেই। অনেক এলাকায় ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক ভালো না। যদি অনলাইনে পরীক্ষা হত, তখন  দেখা যেত পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেকে সুযোগ সুবিধার অভাবে বৈষম্যের শিকার হত।" 

সশরীরে পরীক্ষার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সপ্তম সেমিস্টারের এই শ্রেণি প্রতিনিধি বলেন, “আমরা আমাদের সমস্যাগুলো কোর্স অর্ডিনেটর স্যার এবং চেয়ারম্যান স্যারকে জানিয়েছি। পরে আমাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিভাগ সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।"

স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম রবিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে যে পরীক্ষাটা হয়েছে, সেখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে স্বাস্থ্যবিধির মানা হয়েছে। দুটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা ছিল। এরকম সুন্দর আয়েজনে আমরা শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট।"

বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার কথা জানায়, সরাসরি পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে বিষয়টি নিয়ে অ্যাকাডেমিক কমিটিতে আলাপ-আলোচনা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।” 

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের মাধ্যমে পরীক্ষার রুটিন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে পাঠানো হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করে বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, “সরকার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা করছে। আজকে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।"

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরুতে অনলাইনে ক্লাস না নিলেও ছুটি দীর্ঘ হতে থাকলে গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। 

এর মধ্যে প্রায় সকল  বিভাগ ও ইনস্টিটিউট অ্যাসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে প্রেজেন্টেশন ও মিডটার্ম পরীক্ষা অনলাইনে নিয়েছে। তবে অধিকাংশ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং  মাস্টার্সের পরীক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

অক্টোবরে আবাসিক হলগুলো খুললেও এসময় অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি। 

শিক্ষার্থীদের সুবিধা অনুযায়ী কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে এ সময় স্বাস্থবিধি মেনে সশরীরেও পরীক্ষা নিতে পারবে। 

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগ স্নাতক চতুর্থ বর্ষের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা সরাসরি নিয়েছে। 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং আরবি বিভাগসহ অনেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউট  সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন প্রকাশ করেছে।