এই সাত কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী রোববার বেলা ১১টা থেকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন। তাদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে আজিমপুর-মিরপুর সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার পর বিশেষ পরীক্ষার আশ্বাসে নীলক্ষেত ছেড়ে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই দিনের মধ্যে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা না করলে আবারও আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
কর্মসূচি চলার মধ্যে আন্দোলনকারীদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল দুপুরে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে সেই প্রতিনিধি দলের সদস্য সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, “স্যার বিশেষ পরীক্ষার ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বিভাগীয় চেয়্যারম্যান স্যারদের সাথে আলোচনা করে পরীক্ষার তারিখ জানানোর কথা বলেছেন। আমরা এজন্য দুই দিনের সময় দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি আজকে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। আমি তাদেরকে বলেছি, তারা যাতে তাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান বা অধ্যক্ষদের মাধ্যমে ফেলের সঠিক চিত্র নিয়ে আসে। জেনারেল চিত্র দিয়ে তো কোনো কিছু করা যাবে না। সঠিক চিত্রটা পেলে আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে বিষয়টা বলতে পারব।”
তিনি বলেন, “তারা বিশেষ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছে। এটাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বিশেষ পরীক্ষা তো অবশ্যই নিতে হবে, সেটা আমাদের বিবেচনায় আছে। তবে কোনো সময় বেঁধে দিয়ে নয়, একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমরা তাদের পরীক্ষা নেব “
কর্মসূচিতে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে সাত কলেজের আট থেকে নয়টি বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই ফলাফলে দেখা গেছে ‘বিপর্যয়’। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগে সাতটি কলেজেই গণহারে ‘ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
তিতুমীর কলেজের ২৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৩ জন ফেল, ইডেন মহিলা কলেজের ২১০ জনের মধ্যে ১৭৫ জন ফেল, সরকারি বাংলা কলেজের ১১৬ জনের মধ্যে ৯২ জন ফেল, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন ফেল করেছেন। অন্যান্য বিভাগের ফলাফলও ভালো নয়।
“এত বিপুল শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে কোনো কারণ কলেজ প্রশাসন দেখাতে পারছে না। আমরা চাই খাতাগুলোর আবার মূল্যায়ন করা হোক। "
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “আমাদেরকে চার বছরের জায়গায় ছয় বছর পড়তে হয়েছে। কোনো ক্লাস ছাড়া মাত্র ২০দিনের নোটিসে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর দেখা গেছে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে গণহারে ফেল। তিনশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ জন বা ২৫ জন পাস করেছে।”
তিনি বলেন, “ফেল করার মত পরীক্ষা আমরা দিইনি। আমাদের নিজেদের কনফিডেন্স আছে। আমরা চার বছর পড়ালেখা করেই ফাইনাল ইয়ারের এসেছি, আমরা যদি কোনো পড়ালেখাই না করতাম, তাহলে ফার্স্ট ইয়ারেই আমাদের আরও খারাপ হত বা আমরা এগোতে পারতাম না।”
“ক্লাস না হলেও আমরা ফুল সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছি। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে আমাদের ছয় বছর লেগে গেছে, আমরা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এই সাত কলেজ থেকে মুক্তি চাই, আমরা খাতার পুনর্মূল্যায়ন চাই।"
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় নামলেই কি সমাধান হয়ে যায় নাকি? তাদের উচিত ছিল সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলা। তাদের অধ্যক্ষরা সেটা আমাদের জানাবেস।”
গণহারে ফেলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “খাতা তো দেখেছে সাত কলেজের শিক্ষকরাই, এটা তো আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা দেখেনি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জিজ্ঞাসা করেছি, ওই খাতাগুলো সাত কলেজের শিক্ষকরাই দেখেছেন।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।