‘হিরোশিমা-নাগাসাকির পুনরাবৃত্তি এড়াতে চাই আন্তঃসংস্কৃতিক সংহতি’

হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনার মত আর কোনো নৃশংসতা নয়; বিশ্বব্যাপী আন্তঃসংস্কৃতিক সংলাপ এবং সম্পর্ক সংহতকরণের মাধ্যমে কার্যকর শান্তি বিনির্মাণের আহ্বান এসেছে ঢাকায় এক সেমিনার থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2021, 06:11 PM
Updated : 9 August 2021, 06:11 PM

সোমবার হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবস স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ ও রোটারি  ক্লাব গুলশান টাইগার্সের যৌথ উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

‘উদারতাবাদোত্তর শান্তি ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ’ শিরোনামে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানের কুমামোতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. জুইচিরো তানাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আন্তঃসংস্কৃতিক সংলাপ এবং সংহতকরণের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী শান্তি বিনির্মাণ কার্যকর করা উচিত। কারণ, শান্তিই একমাত্র বিকল্প হওয়া উচিত।

“জাপানের মত পারমাণবিক বোমার নৃশংসতা না সইলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি নৃশংসতা বাংলাদেশ দেখেছে। সেদিক থেকে জাপানের মত বাংলাদেশও এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি চায় না।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট জাপানের হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ নামের একটি পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র । বিশ্বের প্রথম সেই পারমাণবিক বোমা হামলায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ যায়।

তিনদিন পর প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে নাগাসাকি শহরে আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র, তাতে মৃত্যু হয় আরও প্রায় ৭৬ হাজার মানুষের।

মূলত ওই হামলার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। কিন্তু পারমানবিক বোমার তেজস্ক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগে ভুগে দুই শহরে চার লাখের মত মানুষ মারা যায়। বহু বছর পরও দুই শহরে জন্ম নেয় বিকলাঙ্গ শিশু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “শোকের মাস অগাস্টে হিরোশিমা ও নাগাসাকি আমাদের এটা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কীভাবে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান দর্শনকে অন্যের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতম উপায়ে ব্যবহার করতে পারি। তাই স্থানীয়দের সাথে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

সেমিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেন, “যেহেতু জাপান একমাত্র দেশ, যারা পারমাণবিক বোমার নৃশংসতা সয়েছে, আর কোনো জাতি যেন সেই নৃশংসতার মধ্য দিয়ে না যায়, সে লক্ষ্যে জাপানিরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। করোনাভাইরাসের মত আরো বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে চায় জাপান।”

আন্তর্জাতিক রোটারি ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১ এর গভর্নর ব্যারিস্টার মুতাসসিম বিল্লাহ ফারুকি বলেন, বৈশ্বিক শান্তি স্থাপন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমস্যা নিরুপণের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করে আসছে রোটারি।

“হিরোশিমা ও নাগাসাকির পুনরাবৃত্তি এড়াতে রোটারি নিরন্তর জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সাথে কাজ করবে।”

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিস্থাপন প্রক্রিয়ায় আন্তঃসাংস্কৃতিক শিক্ষা একটা বড় পদক্ষেপ। সে লক্ষ্যে আশাব্যঞ্জকভাবে জাপান ও বাংলাদেশের শান্তিস্থাপন নীতি-কৌশলের পারস্পরিক শিক্ষায় সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ বদ্ধপরিকর।”