ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩১ কোটি টাকার বাজেট পাস

গত অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বরাদ্দ কম ধরে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট পাস হয়েছে। যেখানে ঘাটতি রয়েছে ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2021, 06:40 PM
Updated : 24 June 2021, 06:40 PM

বৃহস্পতিবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বাজেট উত্থাপন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই অধিবেশনে সিনেট সদস্যদের আলোচনা-পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস হয়।

মোট ৮৩১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা বাজেটের মধ্যে ৬১১ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৭৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যান্য অনুদান বাবদ ১ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা প্রস্তাবিত ব্যয়ের ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

পণ্য ও সেবা বাবদ ১৬৮ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট ব্যয়ের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। মূলধন খাতে বরাদ্দ ২১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

বাজেটে আয় সম্পর্কে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দেবে ৬৯৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এবার তা বাড়িয়ে রাখা হয়েছে ১১ কোটি টাকা।

এছাড়া গবেষণাগারের সরঞ্জামের জন্য ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে ৫ কোটি টাকা, বিভাগীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ২ কোটি টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয়ের জন্য আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের গবেষণা ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যা টাকার অঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। তবে মহামারীর সময়ে খরচ কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমিয়ে ৭৭৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা হয়েছে।

সংশোধিত বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে ৬৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, নিজস্ব আয় ৬০ কোটি টাকাসহ মোট আয় ধরা হয়েছে ৭৩৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। তাতে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ঘাটতি রয়ে গেছে।

বাজেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিতীয় শতবর্ষের উপযোগী বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি জানান, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় প্রথম একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রীদের জন্য জয় বাংলা হল ও শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।”

নারীর মর্যাদা, অবদান ও ক্ষমতায়নের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর উইমেন, জেন্ডার এন্ড পলিসি স্টাডিজ’ নামে একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য।

মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

“তবে অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। সেশনজটের ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘ক্ষতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে।”

মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধৈর্য্য, সাহস ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হবে।”

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বক্তব্য রাখেন। উপাচার্যের অভিভাষণ ও কোষাধ্যক্ষের বাজেট বক্তৃতার উপর সিনেট সদস্যগণ আলোচনায় অংশ নেন।

ছাত্র প্রতিনিধিদের বিভিন্ন দাবি

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ডাকসু থেকে মনোনীত সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধিরা।

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হলের আবাসিক ফি, পরিবহন ফি মওকুফ করাসহ ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিনা কারণে পুলিশ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়া রোধ করা, অছাত্রদের হলে থাকতে না দেওয়া ও ‘সাময়িক বহিস্কারের’ সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করেন তারা। 

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন স্বার্থক হতো। ধারাবাহিকতা রক্ষায় উপাচার্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা রাখছি।”

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি বিনা কারণে পুলিশ টিএসসি থেকে ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে।”

ডাকসুর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সেবা না দিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবাসন ও পরিবহন ফি নেওয়া হচ্ছে।

“করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এসব ফি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় এনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবি জানাচ্ছি।”

অধিবেশনে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা শিকদার ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।