আয়কর প্রত্যাহার, প্রণোদনা চায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উপর কর আরোপের প্রস্তাবকে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী বলছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2021, 03:26 PM
Updated : 4 June 2021, 03:26 PM

বাজেটে করারোপ না করার পাশাপাশি মহামারীকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে 'অর্থ সঙ্কটে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে' হচ্ছে জানিয়ে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থ আইনের আওতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আদায়ের প্রস্তাব করেন।

আয়কর আরোপ না করার দাবি জানিয়ে শুক্রবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্ট্রের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলছে, যা ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী করযোগ্য নয়।

নতুন অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের বেসরকারি কলেজের উপরও আয়কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাথে ট্রাস্ট আইনে অলাভজনক হিসেবে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একই আওতায় সমভাবে আয়কর আরোপের প্রস্তাব আইনের পরিপন্থী এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।"

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ক্যাম্পাস ভাড়া প্রদান করা অনেক ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে সংগঠনটি।

"একমাত্র অর্থ প্রাপ্তির উৎস হিসেবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিস নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা সময়মত না হওয়ায় শিক্ষার্থী সংকটও দেখা দিয়েছে। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও টিউশন ফিসের উপর ছাড় দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

"এমন সংকটকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপ করা হলে অনুমোদিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।"

সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি বলছে, আয়কর আরোপের প্রস্তাব শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "সরকার যেখানে মেধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বস্তরের শিক্ষা খাতে বিপুল পরিমান অর্থ ভর্তুকি দিয়ে থাকে, সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর করারোপ করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করবে।"

এর আগে ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হ্রাসকৃত হারে করপোরেট কর আরোপ করা হয়েছিল।

পরে ২০১০ সালে নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ করে এনবিআর। এ প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে ৪৬টি রিট আবেদন করা হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় না করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

সেই সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর আদায় বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এনবিআরকে আপিল করার অনুমতি দেওয়া হয়।