টিএসসি: গণপূর্তের নকশা পছন্দ হয়নি ঢাবি কর্তৃপক্ষের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংস্কার নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে যে খসড়া নকশা তৈরি করেছে, তা পছন্দ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2021, 04:44 PM
Updated : 3 Jan 2021, 05:00 PM

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট ভবনের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের একটি দল সভা করেন। সভায় টিএসসিকে ভেঙে নতুনভাবে গড়ার খসড়া নকশা উপস্থাপন করা হলেও তাতে কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন নকশা প্রণয়নে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে সভায় অংশ নেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে আমরা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে যে চাহিদা দিয়েছিলাম, তার আলোকে তারা একটি নকশা তৈরি আজকে মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছে। নকশাটা পুরোপুরি মনঃপূত হয়নি আমাদের। এটাকে আরও মডিফাই করতে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি। নতুন আরও একটি নকশা প্রণয়নের কথা বলেছি আমরা। ওটাতে আমাদের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি সেটি অনুমোদন করলে গণপূর্ত অধিদপ্তর তা বাস্তবায়ন করবে।”

প্রস্তাবিত খসড়া নকশায় দেখানো হয়, টিএসসির পুরনো সব ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ভবন নির্মাণ করা হবে। টিএসসির সামনে যে ভবনটি রয়েছে, তা ভেঙে ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যে অডিটোরিয়াম রয়েছে, তা ভেঙে ছয় তলা করা হবে। অন্যদিকে ক্যাফেটেরিয়া ও অতিথি কক্ষের জায়গায় নয় তলা ভবনের নির্মাণ করা হবে।

আবুল কালাম সিকদার বলেন, “টিএসসির স্বাতন্ত্র বজায় রেখেই সংস্কার হবে। এখন যে তিনটি ভবন রয়েছে, সেরকম তিনটি ভবনেই সব কিছু হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে সেগুলো সম্প্রসারণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বড় পরিসর, সবুজায়ন সবকিছুকেই প্রাধান্য দিয়ে নকশা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।”

গ্রিক স্থপতি কন্সটান্টিন অ্যাপোস্টলোস ডক্সিয়াডেস গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির নকশা করেন। নকশার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রামীণ বসতির চিরায়ত ঐতিহ্যের দিকটি মাথায় রেখেছিলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও যুগের চাহিদা অনুযাযী টিএসসিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর (পিডব্লিউডি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত অক্টোবরে পিডব্লিউডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে টিএসসিকে আধুনিক করতে বিভিন্ন চাহিদার কথা জানান তারা।

চাহিদার তালিকায় টিএসসিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মহড়াকক্ষ, জিমনেশিয়াম, টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক দলগুলোর জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত কক্ষসমূহ, আন্তঃক্রীড়া কক্ষ, আলাদা ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক মিলনায়তন, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট স্থান, অতিথি কক্ষসহ আরও অনেক রকম আধুনিক সুবিধাদির কথা বলা হয়।

বর্তমানে টিএসসিতে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে, চাহিদা তালিকায় তিনটি অডিটোরিয়ামের কথা বলা হয়। যাতে একটিতে দেড় হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা ও অন্য দুটিতে তিনশ লোকের ধারণক্ষমতা হয়। পুরাতন সুইমিংপুল সংস্কার করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় নতুন একটি সুইমিংপুল কমপ্লেক্সের নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

টিএসসির স্থাপনা ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে- এমন খবরে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। টিএসসিকে ‘আধুনিক স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন’ উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার বিরোধিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষকসহ ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ২৬ ডিসেম্বর টিএসসির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের প্রত্যাশা ও সুপারিশ জানতে চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২ জানুয়ারির মধ্যে গুগল ডকস ফরমে তাদের মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে জন্য বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিএসসির বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই টিএসসি সংস্কার করা হবে।”