ডাকসুতে হামলা: এক বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ নূরদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে হামলার বিচার এক বছরেও শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2020, 01:42 PM
Updated : 22 Dec 2020, 01:42 PM

ডাকসু ভবনে হামলার এক বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ শেষে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে পরিষদের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ কর্মসূচি শেষ করেন।

গত বছর ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু ভবনে ভিপির কক্ষের বাতি নিভিয়ে নূরসহ তার সঙ্গীদের উপর হামলার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় নূরসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন৷ ওই হামলার আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও সেখানে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠে।

হামলার ঘটনা তদন্তে পরদিন ২৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়।

তদন্ত কমিটিকে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হলে এখনও তদন্ত শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

এদিকে হামলার দুইদিন পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। অপরদিকে নূরুল হক নূর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ জনের নামে আরেকটি মামলা করেন।

দুই মামলার একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ গত ১০ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে হামলার ঘটনায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের সমাবেশ নুরুল হক নূর বলেন, “ডাকসুতে হামলার স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের উপর হামলার পর ২২ ডিসেম্বর ডাকসুতে নারকীয় হামলা চালিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

“হামলার পর আমরা মামলা করতে গেলে আমাদের মামলা নেওয়া হয়নি। চালাকি করে তারা নিজেরাই মামলা করেছে। এখন আবার সেই মামলার একটি বানোয়াট প্রতিবেদন দিয়ে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ধিক্কার জানাই মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য।”

পুলিশের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নূর বলেন, “একটি মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ধাক্কাধাক্কির মতো একটা ঘটনা ঘটেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি। ডাকসু ভবনে ন্যাক্কারজনক হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতেও নিউজ হয়েছে। সেই মামলায় একটি বানোয়াট প্রতিবেদন দিয়ে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জাতির বিবেক। এখানেই প্রকাশ্য দিবালোকে এ রকম একটি ঘটনার এক বছর পরও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে যেমন আট বছর পেরিয়ে গেছে, তেমনি ডাকসু হামলার তদন্ত প্রতিবেদন সাতদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা দেওয়া হয়নি।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, মশিউর রহমান, সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।