জগন্নাথের বেদখল হল উদ্ধার কি সম্ভব?

শিক্ষার পরিসর বাড়লেও ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার কোনো সুরাহাই হচ্ছে না। কলেজ থাকাকালীন সময়ে বেহাত হওয়া হলগুলো উদ্ধারেও নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2020, 06:30 PM
Updated : 29 Nov 2020, 09:02 PM

হল উদ্ধারে বিভিন্ন কমিটির প্রতিনিধিরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগের অভাবেই আবাসন সংকটে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে হল সরকার উদ্ধার করে দেবে, সেই অপেক্ষায় বসে আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা যেসব হল তৈরি করেছিল, ১৯৮৫ সালের পর থেকে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে।

১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে সাপ্তাহিক চিত্রবাংলার একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলার আব্দুর রহমান হলে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে সেদিনই আজমল হল, বাণী ভবন ও এরশাদ হল (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন) ছাড়া অন্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেয়।

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর কয়েক দফা আন্দোলনে দুইটি হল উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তবে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ ভিপি (১৯৮৭ সালে নির্বাচিত) আলমগীর সিকদার লোটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ছাদ ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব হল ছাড়তে নোটিস দিয়েছিল।

২০১৪ সালে হল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এরশাদ সরকারের সময় ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ লাগিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়, পরে ধীরে ধীরে ভূমিদস্যুরা ছাত্রাবাসগুলো দখল করে নেয়।

বেদখল হলগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটের ৮.৮৮৯ কাঠার তিব্বত হলের জায়গায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নির্মাণ করেন। তবে জায়গা দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি হলটি উদ্ধারে সরব হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই আব্দুর রহমান হলের ফটক থেকে নামফলক মুছে ফেলা হয়।

আব্দুর রহমান হল:
আরমানিটোলার ২৫ দশমিক ৭৭ কাঠা জায়গায় দ্বিতল ভবনটির ফটকে কয়েক বছর আগেও হলের নামফলক ছিল। ২০১৪ সালে হলের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই নামফলকটি মুছে ফেলা হয়।

হল উদ্ধারে কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির তৎপরতায় ওই বছরের ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে হলটিতে কেয়ারটেকার নিয়োগ দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়।

কয়েক দফা হাতবদল হওয়া ছাত্রাবাসটিতে এখন ১৭ জন পুলিশ সদস্য তাদের পরিবার নিয়ে থাকছেন। মামলার নিষ্পত্তি হলে ভবনটি থানা হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার একজন বাসিন্দা।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার ইলিয়াছ হোসেনও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

“ভবনটি নিয়ে এখনও মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে সেখানে আমাদের বংশাল থানা করার প্ল্যান আছে,” বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আনোয়ার শফিক হলের পুরনো ভবন ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান ও গুদাম।

আনোয়ার শফিক হল:
আরমানিটোলার মাহুতটুলীর ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডে ৪০ কাঠা আয়তনের আনোয়ার শফিক হলটি তিন দশকের বেশি সময় ধরে দোকান ও গুদাম বানিয়ে রেখেছে দখলদাররা। এর মধ্যে পুরনো ভবনটি ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে টিনশেডের নতুন স্থাপনা; যেটি এখন সোডা, সাবান ও পাউডারের কেমিক্যালের গুদাম।

গুদামের একজন কর্মচারী বলেন, তারা বিভিন্নজনের মাধ্যমে গুদামে কাজ নিয়েছেন। অনেক বছর ধরে কাজ করলেও মালিকের পরিচয় তারা জানেন না।

জায়গাটি কার দখলে রয়েছে তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে না পারলেও স্থাপনার বাইরে সাইনবোর্ডে জমির মালিক হিসেবে জনৈক আবুল বাশার (বশির) ও সালেহা বেগম (শাবানা) লেখা রয়েছে।

ওবায়দুর রহমান নামের স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “এগুলো এমনিতেই টানানো হয়েছে, এদের কেউ চেনে না। একেকজন একেকদিক দিয়ে এটা দখল করেছে। অন্য কারও নাম লিখে নিজে নিরাপদ থাকতে হয়তো কোনো দখলদার সাইনবোর্ড টানিয়েছে। এর সঠিক মালিক কে তা কেউ বলতে পারবে না। কখনও কোন মালিক আসেনি এখানে।”

নজরুল ইসলাম হল, সেখানে পুরনো ভবনটির সাতটি রুমে নানা সমস্যা নিয়েই ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী থাকছেন।

নজরুল ইসলাম হল:
ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের গোপীমোহন বসাক লেনের এক বিঘা আয়তনের নজরুল ইসলাম হলটি উদ্ধার হয় শিক্ষার্থীদের ২০১৪ সালের আন্দোলনে।

তবে জেলা প্রশাসন ছাত্রাবাসটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দিলেও এখনও এর কিছু অংশ বেদখল রয়েছে। সেখানে একটি গুদাম  রয়েছে, এছাড়া দুটি পরিবার ভাড়া থাকে। ভাড়াটিয়ারা দখলদারের নাম বলতে রাজি হননি।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর দখলে রয়েছে ছাত্রাবাসটির বাকি অংশ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, “ধোলাইখালের ব্যবসায়ী হোসেন সেখানকার শিটকাটিং মার্কেট সমিতির সভাপতি। ছাত্রাবাসটির দখল করা অংশটি হোসেন তার জামাতার নামে লিখে দিয়েছেন। তারাই এখানে গোডাউন ও ভাড়াটিয়া রাখছে।”

হোসেনের ছেলে হিমেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পরিবার এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় বলে জানান।

তবে ছাত্রাবাসটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগী হলে বেদখল অংশটিও উদ্ধার হয়ে যেত।

সাইদুর রহমান ও রউফ রহমান হলে রয়েছে গুদাম, তার মালিকের পরিচয় স্থানীয়দের অজানা।

অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ও আব্দুর রউফ রহমান হল:
নজরুল ইসলাম হলের বিপরীত পাশের হল দুটির ২২ দশমিক ৯৭ কাঠা জমিতে টিনশেড ভবন করে গুদাম করা হয়েছে। রাত ছাড়া গুদামটি খোলা হয় না বলে জানান স্থানীয়রা। এর মালিকের পরিচয়ও কেউ জানাতে পারেননি।

গুদামের বাইরের দেয়ালে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘সকল মালামাল ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নবাবপুর রোড কর্পোরেট শাখার নিকট দায়বদ্ধ’।

যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকটির নাবাবপুর শাখা কর্তৃপক্ষ গুদামে বিনিয়োগ থাকার কথা স্বীকার করলেও কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।

শহীদ শাহাবুদ্দিন হল: তাঁতিবাজারের ঝুলনবাড়ির রাধিকামোহন বসাক লেনের চার কাঠার হলটি ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে আট তলা ভবন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের হাতছাড়া হওয়ার পর প্রথমে আনসার ও পরে পুলিশের হাত বদল হয়ে ২০০৯ সালে হলটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের দখলে চলে যায়। পরে তিনি ফ্ল্যাট ও দোকান বানিয়ে বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিপ্লবকে পাওয়া যায়নি।

আজমল হোসেন হল উদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল।

আজমল হোসেন হল:
বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী রমাকান্ত নন্দী লেনের পাঁচ দশমিক পাঁচ কাঠার হলটির দখলদার পরিবর্তন হয়েছে কয়েক দফা। ২০১১ সাল থেকে সেখানে ‘বেগম রোকেয়া (শহীদ পরিবার)’ নামের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

অবকাঠামো অক্ষত থাকা হলটিতে এখন কয়েকটি পরিবার ছাড়াও বিভিন্ন সমিতি ও ছাপাখানার কার্যক্রম চলছে। তবে কেউই কথা বলতে রাজি হননি।

কর্মচারী আবাস: তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের কর্মচারীদের আবাসস্থল পাটুয়াটুলীর ২৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের জায়গাটিতে এখন ছয় তলা ক্রাউন মার্কেট। ভবনটির বিভিন্ন অংশ কয়েকজন কিনে নিয়েছেন বলে সেখানকার দোকানিরা জানিয়েছেন। তবে ভবনের প্রকৃত মালিকের পরিচয় জানাতে পারেননি তারা।

কর্মচারী আবাস ও আজমল হোসেন হল উদ্ধারে ২০১৪ সালে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে পাটুয়াটুলীতে গেলে পুলিশ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন। পরে জেলা প্রশাসন আজমল হোসেন হল উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করলেও পরে তা আর এগোয়নি।

বজলুর রহমান হল: বংশালে পুরানা মোগলটুলী, মালিটোলায় হলটির ৪.৪০ কাঠা জায়গায় শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা সেখানে হলের ব্যানার টানিয়ে দিয়েছিল।

হল উদ্ধারে বাধা কোথায়?

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে দায়িত্ব পাওয়া মুসিহ-মুহিত অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে হলগুলোর তথ্য উঠে আসে।

পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বেদখল অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি আনোয়ার শফিক, শাহাবুদ্দিন, আজমল হোসেন, তিব্বত ও হাবিবুর রহমান হল বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদী লিজের আবেদন করলেও কেবল হাবিবুর রহমান হল বুঝে পেয়েছে।

এক সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসগুলোতে থাকলেও যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় এগুলো আর উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন হল উদ্ধারে সরকারের গঠিত কমিটির প্রধান স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

জগন্নাথ কলেজের সাবেক এই ভিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো কাগজপত্র নেই, ছাত্ররা পর্যায়ক্রমে হাতছাড়া করে ফেলছে। হলে অন্যরা ঢুকে গেছে। তারা কাগজপত্র, রেকর্ড করে আছে; এখন কী করে উদ্ধার করব?”

স্থানীয়দের ভাষ্য, দখলদারের পরিচয় আড়াল করতে আনোয়ার শফিক হলের বাইরের দেয়ালে অন্য কারও নামফলক লাগানো হয়েছে; এদেরকে কেউ চেনেও না

তবে এই কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আলি আক্কাস সমন্বিত উদ্যোগে হলগুলো উদ্ধার সম্ভব বলে মনে করেন।

“আমরা হয়ত ডকুমেন্ট পাচ্ছি না, কিন্তু যাদের দখলে আছে তাদেরও ডকুমেন্ট নেই। এটা একটা জাতীয় স্বার্থও বটে। সবাই মিলে বসে যদি এটা করা যেত, তাহলে ভালো হত। হল ছাড়া একটা বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনা করা যায় না। ১৫ বছর চলে গেল হল ছাড়া, শিক্ষার্থীরা যে কী পরিমাণ মানবেতর জীবনযাপন করে চলছে।

“সবাই তো জানে এখানে আমাদের ছেলেরা থাকত। সরকার চাইলেই একটা স্টেপ নিতে পারে। সরকার, প্রশাসন এবং যাদের দখলে আছে তাদের সাথে বসলে হলগুলো ফেরানো যায়।”

গত এক দশকে হল উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কমিটিতে কাজ করা এই অধ্যাপক বলেন, “হলের কাগজগুলো যে কে কোন দিক দিয়ে মিসিং করেছে- এটা খুবই বড় প্রবলেম হয়ে গেল। এগুলো যে আদায় করব, আদালতে যাব; সেজন্য তো ফেয়ার ডকুমেন্ট দরকার। যখন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তখন কাগজপত্র ঠিকমতো হ্যান্ডওভার হয়নি। হতে পারে কেউ সরিয়ে ফেলেছে।”

হলগুলো উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগের অভাব ছিল না বলেও দাবি করেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আলি আক্কাস।

তবে হল উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকেকেই দায়ী করেছেন হল উদ্ধারে গঠিত কমিটির আরেক সদস্য সিরাজুল ইসলাম।

“প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই আমরা হলগুলো উদ্ধার করতে পারিনি। হাজি সেলিম স্থানীয় এমপি হওয়ায় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাইনি।

“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের আমলা হওয়ার কারণে বা শিক্ষক হওয়ায় তারা চাচ্ছে না স্থানীয় ভূমিদস্যূদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াতে। এ কারণেই তারা হলগুলোর ব্যাপারে সবসময় বলে, কোনো কাগজপত্র নেই। আসলে দানকৃত সম্পত্তিতে কোনো কাগজপত্র থাকে না। কাগজপত্রের অজুহাত দিয়ে হলগুলো যে তারা দখল করে রাখছে দীর্ঘদিন ধরে, তা খুবই নিন্দনীয় কাজ।”

২০১৪ সালের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছাত্রাবাসে নামফলক টানিয়ে এসেছিল, সেসময় কয়েকটি ছাত্রাবাস উদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি হলেও কেবল নজরুল ইসলাম হলটি দখলমুক্ত করা যায়।

ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের গোপীমোহন বসাক লেনের এক বিঘা আয়তনের নজরুল ইসলাম হল

সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, একটি হল দখলমুক্ত হলে অন্য হলগুলো উদ্ধারের সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে- সেই ভয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকার প্রভাবশালীদের একাট্টা হয়ে যাওয়াটাও বড় বাধা।

“হলগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে ফিরোজ রশিদও কোনো আন্তরিক ভূমিকা পালন করেননি। হাজি সেলিম যেভাবে বিভিন্ন নেতা, পুলিশ ও অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করেছে, তার সাথে আমরা সেভাবে পেরে উঠিনি। হলগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার, আমরা চাই সরকার যাতে এ অধিকার থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত না করে।”

কেরাণীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয় ও সময়সাপেক্ষে হবে জানিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, “শিক্ষার্থীরা যে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে বিভিন্ন মেসে, অবিলম্বে হলগুলো উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।”

যোগাযোগ করা হলে ছাত্রাবাসগুলোর বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার যদি হলগুলো উদ্ধার করে দেয়, আমরা নিতে রাজি আছি। আমরা এটা সরকারের উপর ছেড়ে দিতে চাই।”

ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বাধীন কমিটি হলগুলোর বিষয়ে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিলেও এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান সেই কমিটির এই সদস্য সচিব।