সমালোচনার মুখে ঢাবি সান্ধ্য কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষার্থীদের ‘হয়রানি’

মহামারীর মধ্যে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করার পর সমালোচনার মধ্যে তা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2020, 05:54 AM
Updated : 20 Nov 2020, 08:03 AM

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে আজিমপুর গভার্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের এমবিএ (ইভনিং) প্রোগ্রামের (৪৫তম ব্যাচ) এই ভর্তি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। গণমাধ্যমের এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এই প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করার বিষটি জানানো হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রের গেইটেও এ বিষয়ে নোটিস দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত’ ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, নতুন তারিখ পরে জানানো হবে।

প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল জানিয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা আইনিভাবে বিষয়টা দেখব। পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ পরে জানিয়ে দেব।”

এদিকে একেবারে শেষ মুহূর্তে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানোয় মহামারীর মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরীক্ষার্থদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। এভাবে ভোগান্তিতে ফেলায় তাদের অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

নাজমুস সাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি খুলনা থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছি। অথচ মাত্র আধা ঘণ্টা আগে জানানো হল যে আজকে পরীক্ষাটা হবে না। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যায় না। আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।"

মালিহা সাবিহা নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, “বিষয়টা আমাদের অন্তত একদিন আগে জানানো উচিত ছিল। রাতে জানালেও হত, করোনার মধ্যে আসা লাগত না।”

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবাসিক হলসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মহামারী দীর্ঘায়িত হতে থাকায় শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়।

এদিকে অধিকাংশ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের চলমান সেমিস্টার শেষ হলেও নানা সীমাবদ্ধতা ও জটিলতার কারণে পরীক্ষা নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা ছাড়াই পরের সেমিস্টারের জন্য অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তার মধ্যেই ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত এই অনিয়মিত কোর্সে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়।

বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি থেকে। ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে সহযোগিতার জন্য অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের ওই চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। 

তবে এই পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রশাসনের কাছ থেকেও কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি সান্ধ্যকোর্স আছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে, এসব অনিয়মিত কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার কথা থাকলেও গোপনে তারা ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টা আমাদের জানানো হয়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর আমি ডিন সাহেবের সাথে কথা বলেছি। পরীক্ষাটা ক্যাম্পাসে হবে না শুনেছি। তবে এটা কোন ধরনের পরীক্ষা, কাদের পরীক্ষা, কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে এই পরীক্ষা, বিষয়গুলো আমি জানতে চেয়েছি। উনি বলেছেন, কাল আমাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের কোনো বত্যয় ঘটেনি। এটা নিয়ে কিছু মিস ইন্টারপ্রিটেশন হয়েছে।”

পরীক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “৭০-৮০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ঢাকার ভেতর থেকেই আবেদন করেছে। কিছু শিক্ষার্থী দূর থেকে এসেছে। এতে হয়রানির কিছু নেই।"

আগে কেন জানানো হলো না- এই প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেন, “এত ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না।”

আর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ডিন সাহেবের সাথে কথা বলেছি। নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়ায় তো নিষেধাজ্ঞা আছে। বিষয়টা তাকে বলা পর তিনি তা স্থগিত করার কথা বলেছেন।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এ ধরনের পরীক্ষার আয়োজন নিয়ম লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “ডিন সাহেব বলেছেন, পরে তিনি এটার কারণ ব্যাখ্যা করবেন।”