অধ্যাপক মোর্শেদকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি সাদা দলের

বঙ্গবন্ধুর অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2020, 11:51 AM
Updated : 17 Sept 2020, 11:51 AM

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ আয়োজিত মানববন্ধন থেকে বক্তারা এ দাবি জানান।

সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন মত প্রকাশের, মুক্তবুদ্ধি লালন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। একটি দৈনিক পত্রিকার সূত্র ধরে উদ্ভূত প্রতিক্রিয়া ও পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান নিবন্ধটি প্রত্যাহার করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। এরপরেও একটি মহলের চাপে তাকে চাকরিচ্যুত করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি তাকে একটি বিশেষ মহলের চাপে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা প্রথম স্ট্যাটিউটের ৪৫ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ, অদক্ষতা এবং চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। উপরোক্ত শর্ত অনুযায়ী ড. মোর্শেদ হাসান খান দোষী সাব্যস্ত নন।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের হয়ে এবং একটি বিশেষ মহলকে খুশি করার জন্য কাজ করছে। এ সরকারের আমলে বাংলাদেশে এখন সর্বত্র ভিন্নমতের মানুষের প্রতি নিপীড়ন, নির্যাতন হচ্ছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কেউ রেহাই পাচ্ছে না।

“ভিন্নমত প্রকাশ করার কারণে এ সরকারের হাত থেকে রেহাই পান নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মরহুম অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদও। তার বাসায় হামলা হয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে তাকে আদালতে দাঁড়াতে হয়েছে। ভিন্নমত প্রকাশ করার কারণে এ সরকারের হাত থেকে রেহাই পান নাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলোসহ আরও অনেক।”

অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে। এছাড়া জাতীয়ভাবে আমাদের আরও দুটি অনুষ্ঠান রয়েছে। এক হল মুজিববর্ষ, আরেকটি হল স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন। এই তিনটি মাহেন্দ্রক্ষণে একটি জাতি হিসেবে আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

“কিন্তু এরই মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে তার স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে চাকরিচ্যুত করার মতো ঘটনা আমাদেরকে ব্যথিত করে। এই ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, শিক্ষক সমাজের জন্য এমনকি পুরো জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। আজকের মানববন্ধনের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ভুল বুঝতে পারবে এবং অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিতে পুনর্বহাল করবে বলে আশা রাখি।”

মানববন্ধনে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিস অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে একটি ছোট লেখার কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের পরিপন্থি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মানা হয়নি। দলীয় কারণে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছেন।”

মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।