অগাস্টের ঘটনার জন্য অগণতান্ত্রিক সরকারের দূরভিসন্ধি দায়ী: ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০৭ সালের ২০-২৩ অগাস্ট সেনা সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনার জন্য তৎকালীন সরকারের দূরভিসন্ধিকে দায়ী করলেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2020, 03:55 PM
Updated : 23 August 2020, 03:55 PM

তিনি বলেন, “২০০৭ সালের ২০-২৩ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তৎকালীন অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকারের দূরভিসন্ধিই দায়ী। ক্যাম্পাসে সেসময় যে অরাজকতা চালানো হয়েছিল, সেটা ছিল আমাদের মহান স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। আর যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কালো দিবস’ স্মরণে রোববার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।

রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ২০০৭ সালের শুরুতে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারির কয়েক মাস পর ওই বছর ২০ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সেনাবাহিনীর অবস্থানকালে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সেনা সদস্যের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।

এ ঘটনায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।ক্যাম্পাস থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ ওই ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

পরের দিন ২১ অগাস্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ চড়াও হলে রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

টানা তিনদিন আন্দোলনের পর ২৩ অগাস্ট ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক এবং আটজন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সারা দেশের শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে ছাত্র-শিক্ষকদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে মুক্তি পান কারাবন্দি ছাত্র-শিক্ষকরা।

পরের বছর থেকেই ২৩ অগাস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা।

প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হলে এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শুধু এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “অন্যায়-অপকর্ম করার জন্য এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক অপশক্তি বারবার অগাস্ট মাসকেই বেছে নেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট এবং ২০০৭ সালের ২০-২৩ অগাস্ট একই সূত্রে গাঁথা।

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সেই সময়ের ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের কোনো ঘটনা নয়। এটি সেনাবাহিনী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো বিতর্ক নয়।

“সেদিন যারা কর্তৃপক্ষের অবস্থানে ছিলাম, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো যদি পূরণের ব্যবস্থা করা হত তাহলে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটত না।”

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “১৯৭১ সালের পর ২০০৭ সালের অগাস্টের কয়েকটি দিন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে দুঃসময়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের সুদূরপ্রসারী নীল নকশার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। যেটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ওই ঘটনাকে আমরা পরিকল্পিতই বলতে পারি।”

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, “সেই সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে দুর্বল করা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল যাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সংগ্রাম না করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নিয়েই ওই সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সেই সময়ের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন

ইউজিসি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কারা নির্যাতিত ছাত্র জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।