জগন্নাথে বহু প্রতীক্ষার সমাবর্তন শনিবার

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর প্রথম সমাবর্তনে মিলিত হচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১৮ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 07:38 PM
Updated : 10 Jan 2020, 07:38 PM

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ শনিবার দুপুর ১২টায়  পুরান ঢাকার ধুপখোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনের উদ্বোধন করবেন। তার আগে হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আসবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক পদার্থ বিজ্ঞানী অরুণ কুমার বসাক। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি থাকবেন বিশেষ অতিথি।

সমাবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সমাবর্তন আয়োজনে কমিটি গঠন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সমাবর্তনের জন্য ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে নিবন্ধন শুরু হয়।

২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর প্রথম সমাবর্তন হওয়ায় এবার বিপুল সংখ্যক সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন।

৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের ১৮ হাজার ৩১৭ জন নিবন্ধিত সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৮৭৭ জন স্নাতক, ৪ হাজার ৮২৯ জন স্নাতকোত্তর, ১১ জন এমফিল, ৬ জন পিএইচডি এবং ১ হাজার ৫৭৪ জন সান্ধ্যকালীন কোর্সের সনদ নেবেন।

সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তাদের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হবে। এজন্য গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও পোস্তগোলা থেকে সকালে তিন দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ছেড়ে যাবে।

মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, হাতব্যাগ, পানির বোতল এবং কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে মূল মঞ্চ। সাবেক শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দেড় লাখ বর্গফুটের প্যান্ডেল। শুক্রবার সমাবর্তনের মহড়াও হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতজন শিক্ষার্থীকে একসাথে সমাবর্তন দেওয়ার আয়োজনে চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তবে আমরা আশাবাদী, সব ঠিকঠাক হবে। আশা করি সবার সহযোগিতা পাব।”

সমাবর্তন ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়তি জনসমাগমের চাপ সামলাতে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সূচি অনুযায়ী দুপুর সোয়া ১টায় সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন আচার্য আব্দুল হামিদ। মূল অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্তমান শিক্ষার্থীদের নাটক, চিত্রপ্রদর্শনী ও সংগীত পরিবেশনার পর গান গাইবেন কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার।

সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। প্রশাসনিক ভবনসহ প্রতিটি ভবনে নতুন করে রঙ করা হয়েছে। রাতে হয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।

নিবন্ধিত সাবেক শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের জন্য নিজ নিজ বিভাগ থেকে গাউন, টুপি ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন গত সোমবার থেকে। ফলে সমাবর্তন ঘিরে সাবেকদের পদচারণায় পুরো ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর।

তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। গাউন ও টুপি পরে ছবি তোলা, স্মৃতিচারণ, আনন্দ-আড্ডায় ক্যাম্পাস পরিণত হয় বর্তমান-সাবেকদের মিলনমেলায়।

সাবেক শিক্ষার্থী তাজিন আশরাফী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আবশেষে হতে যাচ্ছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত। আমি আমার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ববোধ করি।”

২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজীব দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সমাবর্তন খুবই সম্মানজনক অধ্যায়। এ মিলনমেলা স্বীকৃতির, বিদায়ের ও গৌরবের।… আমাদের প্রত্যয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাণ্ডারি হবে।”