ঢাবি ক্যাম্পাসে একের পর এক হাতবোমায় একেকজনের সন্দেহ একেকজনকে

হঠাৎ করেই একটির পর একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কারা ঘটাচ্ছে, তার কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দীপক রায়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 01:10 PM
Updated : 30 Dec 2019, 01:10 PM

তবে এই হাতবোমার বিস্ফোরণের জন্য একেক সংগঠন একেক সংগঠনকে সন্দেহ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অবশ্য আশা করছেন, অচিরেই দোষিদের ধরে ফেলতে পারবেন তারা।

ডাকসু ভবনে গত ২২ ডিসেম্বর ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সঙ্গীদের উপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর হামলার পর উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গত ২৬ ডিসেম্বর মধুর ক্যান্টিনের সামনে প্রথম হাতবোমাটি পাওয়া যায়।

তার তিন দিনের ব্যবধানে মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনের আশপাশে আবার কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর সোমবার আবার ঘটে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ, তাতে আহত হন এক ক্যান্টিনবয়।

কারা এই বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে- এর উত্তর দিতে গিয়ে ছাত্রদলের কোন্দলকে দায়ী করেছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

তিনি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্রদলের দুটি গ্রুপের মধ্য থেকে হয়ত এরকম কার্যকলাপ হতে পারে বলে আমরা মনে করছি।”

ডাকসুর এজিএস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রতিককালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি এবং তাদের বিক্ষুব্ধ অংশ, এদের মধ্যে সংঘর্ষ কি না, এটা বিবেচনা করার দাবি রাখে।

“আর সাম্প্রতিককালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি চক্র কাজ করছে সেটি নিয়েও ভেবে দেখার সুযোগ আছে। আর ডাকসু থেকে মৌলবাদী এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আমরা নিষিদ্ধ করি। সেটি নিয়েও একটি অংশের ক্ষোভ আছে, তাই এটিও একটি কারণ হতে পারে।”

তবে ছাত্রদল নেতারা ছাত্রলীগ নেতাদের এই সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছেন।

সোমবার বিস্ফোরণের পর ডাকসু ভবনের সামনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ছাত্রদলের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। আমরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে আসি, আবার চলে যাই।”

তাহলে কারা ঘটাতে পারে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা না জেনে  কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না।”

ডাকসু ভিপি নূরের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সন্দেহের ইঙ্গিত ছাত্রলীগের দিকে।

তিনি নাম উল্লেখ না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের উপর হামলা করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করার জন্যই আমার মনে হয় একটি দল এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।”

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল এই ঘটনায় প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’ দেখছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরপর তিন দিন ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা এবং কাউকে ধরতে না পারা প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্যজ্ঞানের চরম ব্যর্থতার প্রকাশ।

“তিন দিন এই ঘটনা ঘটল, এরপরও প্রশাসন নিশ্চুপ এবং আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখছি না। এভাবে নিশ্চুপ থাকলে আজকে হয়ত ককটেল রাখছে, পরে হয়ত দেখা যাবে যে আরও ভয়ঙ্কর কিছু রেখে গেছে।”

একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষোভ এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশংঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’কেও দায়ী করেছে সংগঠনটি।

রোববার সংগঠনটির সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়ও বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাব, ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার।”

ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম বলেন, “আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানাব, আপনারা সর্বোচ্চ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন, প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিন।”

প্রথম হাতবোমাটি পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেটি নষ্ট করেছিল। এরপর প্রতিটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।

উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রদল নেতা রাকিব বলেন, “আমরা প্রক্টর স্যারকে বলেছি, আপনার কাছে যে ধরনের উইং রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে জড়িতদের শনাক্ত করুন। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনুন।”

এদিকে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের পরিষদের নেতা মামুন।

তিনি বলেন, “প্রক্টর স্যার ঠিকমতো তদারকি করছেন না, তিনি চাইলেই তো দুইজন কর্মচারীকে গোপন পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন যে এটা কে বা কারা করছে, তাহলেই তো তিনি বের করতে পারেন। আমার মনে হয় যে উনি নিজেও এই বিষয়ে জানেন, আসলে কারা এগুলো করছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতবোমা বিস্ফোরণের এই ঘটনা আলোচিত জাতীয় রাজনীতিতেও।

রোববার এক সমাবেশে সাবেক ডাকসু ভিপি ও জেএসডির সভাপতি আ স ম রব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কারা ফাটায়? প্রক্টর সাহেব জানেন না? ভাইস চ্যান্সেলর জানেন না? রেজিস্ট্রার জানেন না?”

অভিযোগের মুখে থাকা প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে তথাকথিত ভুঁইফোড় কিছু সংগঠন এই ধরনের কাজ করছে বলে আমাদের ধারণা। যাদের উদ্দেশ্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করা।”

জড়িতদের চিহ্নিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি, পুলিশ আমাদের সাহায্য করছে, আমরা হাতে-নাতেই তাদেরকে ধরব।”