জবি চারুকলার ‘মিস ফান্ডের’ টাকা যায় কোথায়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘মিস ফান্ড’ নামে অদ্ভুতুড়ে এক তহবিলে নিয়মিত টাকা আদায় করা হলেও কেন এই ফান্ড, এর টাকা কোথায় খরচ হয়, এসব বিষয় কোনো কিছুই তাদের জানানো হয় না।

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2019, 08:19 AM
Updated : 10 Sept 2019, 09:47 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানের মুখে বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ফি হিসেবে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ব্যবহারিকের সব উপকরণই তাদের নিজেদের পয়সায় কিনতে হয়। তাহলে এই টাকা যায় কোথায়? ‘মিস ফান্ড’ নিয়ে বিভাগের লুকোচুরিতে ক্ষুব্ধ তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে ভর্তি ফি ও শেষে পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হয়। এই টাকা আদায়ে ‘ভর্তি ফি’ ও ‘বিবিধ ফি’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সম্বলিত দুটি ব্যাংক রশিদ বিভাগ থেকেই সরবরাহ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি আদায় করা হয় অগ্রণী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ৩৪০২৭১০৯ ও বিবিধ ফি নেওয়া হয় সঞ্চয়ী হিসাব ৩৪০২৭৪০৬ নম্বরে। টাকা জমা দেওয়ার পর রশিদের দুটি অংশ জমা থাকে ব্যাংকে। আর রশিদের একটি অংশ রেজিস্ট্রার অফিসের জন্য এবং অন্যটি শিক্ষার্থীর অংশ।

এই দুই দফাতেই ‘মিস ফান্ড’ নামের একটি রশিদও শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে ২৫০ টাকা করে অগ্রণী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব ০২০০০০২৫২৭৫২৫ নম্বরে জমা নেওয়া হয়।

ভর্তি ও বিবিধ ফি রশিদের চারটি অংশ থাকলেও ‘মিস ফান্ড’ রশিদের দুটি অংশ, যার একটি ব্যাংকে জমা দিয়ে অন্যটি বিভাগে দিয়ে দিতে হয় শিক্ষার্থীকে। ফলে তার কাছে কোনো কপি থাকে না।

বিভাগের এই গোপনীয়তায় ক্ষুব্ধ বিভাগের প্রথম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিপার্টমেন্ট শুরু থেকেই মিস ফান্ডের নামে চাঁদা নিচ্ছে। এই টাকা কেন নিচ্ছে আমরা জানিনা। অফিসে জানতে চাইলে, বলা হয়, তারাও জানেনা বিষয়টা।”

বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতি সেমিস্টারে লক্ষাধিক টাকা আদায় করছে বিভাগ এ ফান্ডের মাধ্যমে। অন্য কোনো বিভাগে এমন অদ্ভুত ফান্ড নেই।

“এই টাকা কেন নেওয়া হয়, সেটা কোথায় যায়- তার কিছুই আমাদের জানানো হয় না। আমাদের তো জানার অধিকার আছে, টাকাটা কেন দিচ্ছি।”

এ বিষয়ে জানতে চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আলপ্তগীনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই ফান্ডের নামে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে, আমি তা জানিনা। আপনি বিভাগে এসে সরাসরি কথা বলেন।”

পরে বিভাগে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

যোগাযোগ করা হয় বিভাগের কার্যালয়ের সেকশন অফিসার ফয়সাল গিয়াস উদ্দিন ইস্কান্দারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “মিস ফান্ডের টাকাটা নিচ্ছি ব্যবহারিক বাবদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান আছে এর অর্ধেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে, বাকিটা বিভাগের ফান্ডে জমা হবে।”

তাহলে যেখানে অন্যান্য বিভাগে শুধু পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ব্যবহারিক ফি নিচ্ছে, সেখানে চারুকলায় কেন দুই দফায় এই ফি নেওয়া হচ্ছে?

এ প্রশ্নে ফয়সাল গিয়াস বলেন, “সব বিভাগই দুইবার করে নেয় পরীক্ষা ব্যয় পরিচালনার জন্য। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।”

তার দাবির সত্যতা খুঁজতে কয়েকটি অন্যান্য বিভাগে খোঁজ নেওয়া হয়, কিন্তু কোথাও ভর্তির সময় ব্যবহারিক ফি নেওয়ার প্রমাণ মেলেনি।

সেকশন অফিসার ব্যবহারিক বাবদ এই ফি নেওয়ার কথা জানালেও শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

তাদের ভাষ্য, শুধু ড্রয়িং পরীক্ষার সময় দুই থেকে পাঁচ টাকার দামের একটি কাগজ দেওয়া হয়। রঙ, ক্যানভাসসহ কোনো উপকরণই তারা বিভাগ থেকে পান না। এমনকি বিভাগে স্থায়ী কোনো মডেলের ব্যবস্থাও নেই।

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “বিভাগ চলছে ফকিরি হালে, কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই। সব ম্যাটারিয়ালস আমাদের কিনতে হয়, এজন্য আমাদের অনেক খরচ হয়। এগুলো আমাদের চাঁদা তুলে কিনতে হয়। সেখানে এই ফান্ডের টাকায় কি হচ্ছে, সেটা কেউই জানি না।”

শিক্ষার্থীদের এমন অভিযেগের কথা জানানো হলে সেকশন অফিসার ফয়সাল গিয়াস উদ্দিন ইস্কান্দার বলেন, “ব্যবহারিক জিনিসের দাম বেশি, তাই সব আমাদের পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব না। মাটি, রঙ, ক্যানভাস এসব তো সরবরাহ করি।”