‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালায় ধস নামবে উচ্চশিক্ষায়’ 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অভিন্ন নীতিমালাকে ‘স্বায়ত্তশাসন বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2019, 09:22 AM
Updated : 5 Sept 2019, 09:24 AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের বিপরীতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে কর্মসূচিতে এ দাবি তোলেন বক্তারা।

মানববন্ধনে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।

মানববন্ধনে ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, “যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিন্ন করতে চায়, আমি বলতে চাই তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণত বলা হয়ে থাকে দেশের ভেতরে আরেকটি দেশ।

“বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্লামেন্টের মতো সিন্ডিকেট থাকে, যেখানে সকল নিয়ম-কানুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রণয়ন করবে। এখানে সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার মাধ্যমে আইন প্রণীত হয়। এটি স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারও আরোপ করার বিষয় না।”

তিনি বলেন, “অভিন্ন নীতিমালার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের যে নীলনকশা দেখতে পাচ্ছি তাকে থামাতে না পারলে আমাদের উচ্চশিক্ষার মানের ক্ষেত্রে একটা ধস নামবে। ধস থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব মনে করি বলেই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।

“সবাইকে এক করার যে প্রয়াস এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যায় না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কেমন হবে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা বিবেচনা করা হবে তা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করবে।”

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়ে ওই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করে। প্রভাষক থেকে শুরু করে অধ্যাপক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিন্ন মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়া হয় সেখানে।

এই খসড়া এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

ইউজিসি বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের কোনো সমন্বিত নীতিমালা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অভিন্ন নীতিমালার মাধ্যমে সেই বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব।

মানববন্ধনে ফোরামের বিবৃতি পড়ে শোনান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলতাফ হোসেন রাসেল।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ইউজিসির ১৪৬তম সভায় এদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি-পদোন্নয়ন বিষয়ক এক অভিন্ন নীতিমালা গৃহীত হয়, যা তার কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করার সূক্ষ্ম প্রয়াস। এ পরিপ্রেক্ষিতে এই নীতিমালা নিয়ে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে, আর অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নীতিমালাটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম মনে করে, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ঢালাওভাবে বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তা বৈচিত্রপূর্ণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একধরনের ভুল সাধারণীকরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী এবং বর্তমান সরকারেরই গত ১০ বছরের শিক্ষার উন্নয়নকে অস্বীকার করা।

প্রস্তাবিত নীতিমালা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়, অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুযোপযোগী বাস্তব নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।