৭ কলেজে সমস্যার কথা স্বীকার করে দাবি পূরণের আশ্বাস ঢাবি কর্তৃপক্ষের

কিছু ‘জটিলতার’ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ‘অসুবিধা’ সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2019, 10:32 AM
Updated : 24 April 2019, 03:50 PM

সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বুধবার বিকালে তাদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীরা বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছে বিক্ষোভ দেখায়।

পরে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বেলা ২টার দিকে রাস্তা ছেড়ে সরে যায় আন্দোলনকারীরা।

উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বি এম শাহিন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ৫ দফা দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাস দেয়ার পর বিকালে আমাদের ১৪ জন প্রতিনিধি উপাচার্যের সভাকক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি।

“এর আগেও তারা একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছেন তবে কাজ হয়নি। তারপরও আমরা আশ্বাসের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করছি। তবে সামগ্রিকভাবে আমাদের পরবর্তী করণীয় আগামীকাল সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজের ক্যান্টিন থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেব।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত থেকেই চলমান সব সমস্যার সমাধান চান তারা।

অবস্থান কমসূচিতে অংশ নেওয়া মিরপুরের সরকারি বাংলা কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধিভুক্তি বাতিল নয়, আমরা আমাদের চলমান সমস্যার সমাধান চাই। কারণ এখন অধিভুক্তি বাতিল করলে আমি মনে করি এই সমস্যা আরও বাড়বে।”

ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া চৌধুরী বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে অধিভুক্ত হওয়ার পর ওরা আমাদের মেধাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি বা করা হচ্ছে না। কিন্তু আমরা অধিভুক্তি বাতিল চাই না।

“যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে দেওয়া হবে, উনার মতামতের ওপর আমরা অবশ্যই কথা বলব না। আমরা অধিভুক্ত থাকতে চাচ্ছি কিন্তু আমরা চাই আমাদের মেধাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হোক।”

জাকিয়া বলেন, “আমরা চাই আমাদের জন্য একটা আলাদা প্রশাসনিক ভবন করা হোক যেখানে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে সহজে কাজ করতে পারি।”

একই কথা বললেন ঢাকা কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজীবুর রহমান।

“আমরা অধিভুক্তি বাতিল চাই না। কিন্তু এই অধিভুক্তির ফলে প্রতিবছর যে সেশনজটের মধ্যে আমরা পড়ছি, এই সমস্যা সামনে যাতে না হয় সেজন্য আমরা প্রশাসনের সহায়তা চাইছি। আমরা যে সেশনজটের শিকার হয়েছি, শুধু অধিভুক্তি বাতিল করলেই তো এখন আর সেই সময়গুলো আমরা ফিরে পাব না।”

নীলক্ষেত মোড়ে শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ চলার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় সংবাদমাধ্যমে।

সেখানে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়েছে, তাদের কিছু জটিলতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক অসুবিধা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাদের এসব সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছে।” 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সকল বিষয়ের ফলাফল প্রকাশ করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব বিষয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের আবেদনের ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

“সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে স্বতন্ত্র সেল গঠন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। অধিভুক্ত সাত কলেজের সেশনজট নিরসনকল্পে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নেওয়ার বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের জন্য অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরির কাজও প্রক্রিয়াধীন।”

উপাচার্য আগামী ২৮ এপ্রিল সাত কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে এসব বিষয়ে বৈঠক করবেন এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে ‘জনভোগান্তি নিরসনে’ শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী দাবি পূরণের আশ্বাস নিয়ে বেলা দেড়টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে গেলে আন্দোলনকারীরা খোদ উপাচার্যের মুখ থেকে ওই প্রতিশ্রুতি শুনতে চান।   

পরে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের বৈঠকের সময় ঠিক হলে বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে যান।