ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগের বিদায়ী দুই শিক্ষকের জন্য ভালোবাসা

নানা আয়োজনে জ্যেষ্ঠ দুই শিক্ষককে বিদায় জানালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2019, 04:06 PM
Updated : 20 April 2019, 04:06 PM
অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মো. আলী এবং আখতার সুলতানার শিক্ষকতা জীবনের অবসর উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকে এই ‘অগ্রায়ন’ শীর্ষক আয়োজন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে।

বিভাগের চেয়ারপার্সন কাবেরী গায়েনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপিস্থত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমানসহ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

অনুষ্ঠানে কাবেরী গায়েন বলেন, “আমরা সাধারণত বিদায় কথাটি ব্যবহার করি না। এক্ষেত্রে আমরা অগ্রায়ন শব্দটি ব্যবহার করি। আজ আমাদের দুজন অত্যন্ত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে সম্মাননা জানাচ্ছি। তারা ৩৫ বছর ধরে তারা আমাদের পড়িয়েছেন, আমাদের দেখার চোখকে সৃষ্টি করেছেন।

“আখতার সুলতানা সব সময় বলতেন, শিক্ষকতা কোনো খণ্ডকালীন বিষয় না। এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। এর মাধ্যমে তিনি শুধু এই বিভাগের বর্তমান, সাবেক ও অনাহত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অমোঘ বাণী। আহাদুজ্জামান স্যার আমাদের ক্রিটিক্যাল স্কুলসহ অনেক কিছু শিখিয়েছেন, যা আমি এখনো মেনে চলি।”

সারাবাংলা ডট নেটের সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “আহাদ স্যার সম্পর্কে বলতে গেলে স্বামী বিবেকানন্দের একটি কথা মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘বিধাতা আকাশ থেকেও আসেন না বা মাটি ফুঁড়েও আসেন না।  ঈশ্বর মানুষের মাঝেই বিরাজ করে’। আহাদ স্যারও এমন একজন মানুষ।  আমি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে তিনি এক আমাদের সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেছিলেন, যা এখন আমরা বুঝতে পারি। তিনি একজন সুন্দর মানুষ, সুন্দর মনের মানুষ।”

তিনি বলেন, “আখতার সুলতানা ম্যাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন শিক্ষক যিনি কোনো ধরনের রাজনীতি না করে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি আমাদের মায়ের মতোই স্নেহ করতেন। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।”

অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, “অবসরগ্রহণ করা মানে হল খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়া। এতদিন ধরে চলতে থাকা অনুশাসন থেকে মুক্ত হওয়া। যেহেতু আখতার সুলতানা ও আহাদুজ্জামান খাঁচা থেকে মুক্ত হচ্ছেন, এখন যেহেতু তারা আর খাঁচায় বন্দী নেই, তাদের এখন আরও বেশি কিছু দেশকে দিতে হবে।”

অধ্যাপক আহাদুজ্জামান বলেন, “আমি নিজেকে  শিক্ষক হিসেবে মনে করি না। আজীবন ছাত্রই রয়ে গেছি আমি। আমি খুব শিক্ষক সুলভ ছিলাম না। আমি অনেকদিন বটতলায় ক্লাস নিয়েছি, মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদের সঙ্গে গল্প করেছি। সুতরাং আমি কখনই শিক্ষকসুলভ ছিলাম না। শেখাটা এখনও আমার অব্যাহত রয়েছে।  শিক্ষার্থীদের শেখাতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি।”

অধ্যাপক আখতার সুলতানা বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “শিক্ষক ও ছাত্র আমাদের একই গোল। সহায়তা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক দ্বারা এটা অর্জন করা যায়। কেউ আমাদের সম্মান করবে এটা নয়, সম্মান অর্জন করতে হয়।

“ছাত্র ছাত্রীরা আমাদের ছেলে-মেয়ের মতো। আমাদের সব সময় তাদের পাশে থাকতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে, প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে হবে। তিন দশক পূর্বে যাদের পড়িয়েছি, তারাও এখানে আসছে। এর চেয়ে বড় সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ আর কি হতে পারে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। দুই শিক্ষককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কাবেরী গায়েন।

তাদের ফুল দিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান বিভাগের প্রভাষক তাহমিনা হক দিনা ও মো. আসাদুজ্জামান কাজল।

প্রীতি উপহার দেন বিভাগের শিক্ষক আবুল মনসুর আহমেদ ও গীতিআরা নাসরীন। তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন শিক্ষক মফিজুর রহমান ও কাবেরী গায়েন।

অনুষ্ঠানে ২৩টি প্রবন্ধ ও আহাদুজ্জামান মো. আলী ও আখতার সুলতানার দুটি সাক্ষাৎকার সমৃদ্ধ ‘অগ্রায়ন জার্নাল’ উন্মোচন করা হয়।