নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে শনিবার সকালে ডাকসু ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, যিনি পদাধিকার বলে এই ছাত্র সংসদের সভাপতি।
তবে ডাকসু নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন, সে সময় ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির প্রতিবাদ জানিয়ে পাশেই মিছিল করেন ভোটবর্জনকারী কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আরেক দল টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে দেখান ‘লাল কার্ড’।
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় কয়েকজন নির্বাচিত সম্পাদককে সাথে নিয়ে ডাকসুর দ্বিতীয় তলায় বৈঠক স্থলে আসেন নবনির্বাচিত এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তার পরেই চারজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় হুইল চেয়ারে চেপে সেখানে পৌঁছান ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য যোশীয় সাংমা চিবল।
ডাকসুর বৈঠকের শুরুতে ’৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, ’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রথম বৈঠকেই যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে, তা ফুটে ওঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই।
অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বক্তব্যের শুরুতেই সাংবাদিকদের জানালেও তার মুখে হাসি ছিল না। এ সময় এক সাংবাদিক জানতে চান-এত ভালো আলোচনা হলে আপনার মুখে হাসি নেই কেন?
জবাবে আখতারুজ্জামন বলেন, “ভিপি, জিএসসহ ডাকসুর কার্যকরী পর্ষদের ২৫ জন সদস্য নিয়ে প্রথম সভার মধ্য দিয়ে নতুন পর্ষদ যাত্রা শুরু করল। বৈঠকে তাদের আলাপচারিতা ও বক্তব্য ছিল অনেক আশাপ্রদ। তারা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবগুলো বাঁকে ছাত্র সমাজের অগ্রণী ভূমিকার কেন্দ্রে থাকা ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর কয়েক দফায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নেমেছে মাঠে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আবেদন হলে গত বছর আদালত এই মার্চের মধ্যে ভোট আয়োজনের সময় বেঁধে দেয়। এরপর নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ১১ মার্চের ওই ভোটে ডাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোতে জয়ী হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেল। অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় অধিকাংশ প্যানেল।
ডাকসুর বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই নির্বাচনের ফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ পরে মৌন মিছিল করে ভোট বর্জনকারী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আরেক ভোট বর্জনকারী সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন ডাকসুর সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করে পুননির্বাচনের দাবি জানায়। সে সময় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ডাকসুর এই নেতাদের ‘লাল কার্ড’ দেখায় ছাত্র ইউনিয়ন।
উপাচার্যের কথা শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকরা ভিপি নূরের বক্তব্য জানতে চাইলে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, “বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বলতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করা, দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা, ক্যাম্পাসে গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা, রিকশা ও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন, একমুখী চলাচল, গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি বিলোপ, হলে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বহিরাগতদের বের করা এবং মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে ডাকসু নেতারা জানান।
আপত্তির কারণ হিসেবে নূর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। এখানে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়াটা তার জন্য বড় কিছু নয়।
“যেহেতু এই নির্বাচনটি সার্বজনীনভাবে সব শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। একটি অংশ এই নির্বাচন বর্জন করেছে। আটজন শিক্ষক, যারা একেবারেই নিরপেক্ষ, তারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এখানে অনিয়মের কথা বলেছেন। সুতরাং এই বিতর্কিত নির্বাচনে চাই না প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য হিসাবে ঘোষণা করা হোক।”
হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুম, মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ ও বহিরাগতদের বের করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নূর প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনিই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস রাব্বানী।
পরে ডাকসু নেতারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শিখা চিরন্তণীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে রওয়ানা হন।