ডাকসু: ফের ভোটের দাবিতে অনশন দ্বিতীয় দিনে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবিতে ছয় শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2019, 08:14 AM
Updated : 13 March 2019, 08:14 AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মঙ্গলবার রাতে অনশন শুরু করেন চার শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুজন।

অনশনরত আল মাহমুদ ত্বাহা সাংবাদিকদের বলেন, “পূণঃতফসিল চাই আমরা। যারা হলে হলে শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছে, যারা ব্যালটে সিল মেরে আগের রাতে বস্তাবন্দি করতে সাহায্য করেছে, যারা যারা ভণ্ডামির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর আমরা অনশন ভাঙব।”

অনশনে ভূতত্ত্ব বিভাগের ত্বাহার সঙ্গে রয়েছেন দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের অনিন্দ্য মণ্ডল, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের মাঈন উদ্দীন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তাওহীদ তানজিম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রাফিয়া তামান্না।

তাদের মধ্যে তাওহীদ স্বতন্ত্র জোটের প্যানেল থেকে ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক পদে এবং অনিন্দ্য, শোয়েব ও মাঈন উদ্দিন হল সংসদের বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিলেন।

পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানোর পাশাপাশি ১১ মার্চের ভোটে দায়িত্ব পালনকারী সবাইকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছেন তারা।

২৯ বছর পর সোমবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই কারচুপির অভিযোগ তুলে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবি তুলেছিল ছাত্রদল, বাম জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি জোটের প্যানেল।

সেদিন গভীর রাতে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ডাকসুতে ২৫টি পদের ২৩টিতে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ জিতলেও ভিপিসহ দুটি পদে জয় পেয়েছে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকারীদের প্যানেল।

ভিপি পদে পরাজয় মানতে না পেরে ছাত্রলীগ মঙ্গলবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করলেও পরে সংগঠনের সভাপতি ও ভিপি পদে পরাজিত প্রার্থী রেজওয়ানুল হক শোভন নির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূরকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

শোভনের সঙ্গে করমর্দন ও কোলাকুলির পর নূর অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও পরে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার আন্দোলনে ভিপি হিসেবে তিনিও থাকবেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বুধবার সকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে অনরশনরত ছয় শিক্ষার্থীর দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাবেক ভিপি হিসেবে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা জানিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে এসেছি।

“আমি মনে করি যে নির্বাচন হয়েছে সেটা কোনো নির্বাচন না। এই নির্বাচনের মাধমে ঐতিহ্যবাহী ডাকসুকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।”

নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচ প্যানেলের নেতারাও বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে অনশনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।

বাম জোটের ভিপি প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, এজিএস প্রার্থী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক, ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবীবা বেনজীর, কোটা আন্দোলনকারীদের প্যানেল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জিএস প্রার্থী মুহাম্মদ রাশেদ খান, এজিএস প্রার্থী ফারুক হাসান, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের জিএস প্রার্থী এ এম আর  আসিফুর রহমান এবং স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান উপস্থিত ছিলেন এ সময়।

ফারুক হোসেন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তিন দিনের মধ্যে এই নির্বাচন বাতিল না করলে আমরা রোববার থেকে কঠোর কর্মসূচি দেব।”