ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন তিন মাস পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2019, 07:33 AM
Updated : 24 Feb 2019, 08:23 AM

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান।

এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা 'খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা', 'হলে ভোটকেন্দ্র, মানি না মানব না'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। দেড় ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সেখান থেকে সরে যান তারা। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, "ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কতটা আন্তরিক তা আপনারা দেখেছেন। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এমন একটি সময়ে ডাকসু নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে যখন ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গুম, ক্রসফায়ার, হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজের এলাকায়, নিজের বাড়িতে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।

"ডাকসুর প্রতি ছাত্রদলের যে মমত্ববোধ, যে বিজয়ের ইতিহাস, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে ইতিহাস ও ডাকসুর সাথে ছাত্রদলের যে আত্মিক সম্পর্ক, সে কারণে ডাকসু নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানিয়ে এসেছিলাম।"

কিন্তু সাত দফা দাবি আদায়ে প্রশাসনের সব পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন এই ছাত্রদল নেতা।

আকরামুল হাসান বলেন, "প্রশাসনের আচরণে আজকে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক যেমনিভাবে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি, শাখা কমিটি গঠনের জন্য কাজ করছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ডাকসু শাখা গঠনের কাজটি করছে।"

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল অন্য সংগঠনগুলোও তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেসব দাবি কানে তুলছে না।

“সেই দাবির কোনো মূল্যায়ন তারা করেনি। একগুঁয়েভাবে এবং তড়িঘড়ি করে, যেনতেনভাবে একটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে ডাকসুকে তারা কার্যকর করার পরিবর্তে দখল করতে চায়।"

ডাকসু ঘিরে ‘ষড়যন্ত্র’ ছাত্রদল তার জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ার করেন আকরাম। 

"যদি কোনো ধরনের টালবাহানা হয়, যদি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দাবানল জ্বলে ওঠবে।"

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, "হলে হলে মিনিমাম সহাবস্থান এখনো নেই। ডাকসু নির্বাচন তড়িঘড়ি দেয়া হচ্ছে।”

সাতদফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন মেহেদী।

ডাকসু নির্বাচন তিন মাস পেছানো ছাড়াও হলের বদলে অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করা, নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা প্রার্থিতার বয়সসীমা বাতিল করে ডাকসু ও হল সংসদের ফি প্রদানকারী সব শিক্ষার্থীকে ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি রয়েছে তাদের সাত দফার মধ্যে।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এসব দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল ছাত্রদলের পক্ষ থেকে।

অবস্থান কর্মসূচির সঞ্চালকের বক্তব্যে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, "আমরা ধাপে ধাপে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তারা আমাদের কোনো দাবিই মেনে নেননি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজপথে থেকেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করে নেব।"

ছাত্রদল কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই উপাচার্য কার্যালয়ের কলাপসিবল গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রশাসন। পরে সেখানেই ব্যানার নিয়ে বসে পড়েন নেতাকর্মীরা।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। ১১ মার্চ হবে ভোটগ্রহণ।