ডাকসু: পাল্টাপাল্টি দাবি ছাত্র সংগঠনগুলোর

ডাকসু নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগেও ছাত্র সংগঠনগুলোর মতভেদ কাটেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 01:05 PM
Updated : 17 Feb 2019, 01:11 PM

রোববার মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে ভোট পেছানোর দাবি জানিয়েছেন ছাত্রদল নেতারা। হলে ভোটকেন্দ্র নিয়ে তাদের তোলা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

অন্যদিকে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে 'প্রগতিশীল ছাত্রজোট' ও 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য'।

তিন দশক পর এবার আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১১ মার্চ ভোটের দিন রেখে ঘোষিত তফসিলে হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো শুরু থেকেই হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ চাইছিল, ভোটকেন্দ্র আগের মতো হলেই হোক।

নয় বছর পর মধুর ক্যান্টিনে রোববার তৃতীয় দিনের মতো গিয়ে ছাত্রদলের নেতারা বলেছেন, ‘আস্থাশীল সহাবস্থানের’ জন্যই ডাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। 

ভোটের আগে ‘আস্থাশীল সহাবস্থান’ চায় ছাত্রদল

দুপুর ১২টায় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী জনা বিশেক নেতাকর্মী নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে ঢোকেন। তার ২০ মিনিট পর যোগ দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। 

আকরাম ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি একটা আস্থাশীল সহাবস্থানের পরিবেশ৷ আমরাও চাই,ডাকসু দ্রুত কার্যকর হোক৷

“কেবল ডাকসু নির্বাচনকে হালাল করতেই যদি সহাবস্থানের নামে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়, সেটা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে তামাশা৷ আস্থাশীল সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরির জন্যই আমরা নির্বাচন পেছানোর দাবিটি জানাচ্ছি৷"

ছাত্রদল মধুর ক্যানটিনের পাশাপাশি হলগুলোতে তাদের নেতা-কর্মীদের নিরাপদে থাকা নিশ্চিতের দাবি জানান। ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে স্থাপনের দাবি জানান তিনি। নির্বাচন ঘিরে গঠিত কমিটিগুলো পুনর্গঠনের দাবিও তিনি তোলেন।

দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে থাকবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আকরাম বলেন, “আমরা ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকতে চাই। সর্বশেষ যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে সেটাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। যদি একটি নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা হয় তাহলে ছাত্ররা আবারও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ওপর আস্থা রাখবে।”

‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাচ্ছে ছাত্রদল: ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগকে সুবিধা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলে রেখেছে বলে যে অভিযোগ করছে অন্য সংগঠনগুলো, তার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেছেন, নিজেদের ‘অযোগ্যতা ঢাকতেই’ প্রশাসন ও ছাত্রলীগের উপর দোষ চাপাচ্ছে ছাত্রদল।

তিনি দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপার। ছাত্রদল এ কথাগুলো বলছে, কারণ তারা নিশ্চিত, তারা প্যানেল দিয়ে বিজয়ী হতে পারবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আছে, তাদের বয়স ৪০ এর কোঠায়। তারা নির্বাচন করতে পারবে না, তাদের ছাত্রত্বও নেই।

“এই জন্যই বিষয়গুলো নিয়ে তারা গড়িমসি করছে। তারা ভয় পেয়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে। দোষটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিচ্ছে, আমাদেরকে দিচ্ছে। উদোর পিন্ডি তারা বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।”

হলে ভোটকেন্দ্র রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ৭টিই কিন্তু বলেছে, তারা ভোটকেন্দ্র হলেই চান। টিএসসিভিত্তিক ২২টি সংগঠন একসাথে মধুর ক্যান্টিনে এসে বলেছে, তারাও ভোটকেন্দ্র হলেই চান। যে মেজরিটি শিক্ষার্থীরা হলে থাকেন, তাদের নৈতিক অধিকারকে অবমাননা করছে একটি বিশেষ দল।"

বিএনপির আমলে ১৯৯৪ সালে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হলে ছাত্রলীগ হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছিল। তখন ছাত্রদল ছিল হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী বলেন, “ওই সময়ের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ছাত্রদলকে আমরা পহেলা ফাল্গুনে ফুল দিয়ে বরণ করি, তাদেরকে আমরা চা খাওয়াই, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্যাম্পাস দেখাই।

“আর ওই সময়ে (১৯৯৪ সালে) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ঢুকতে পারে নাই। তারপরও কিন্তু প্রশাসন ছাত্রলীগের ওই দাবিকে অযৌক্তিক মনে করে বাতিল করে দিয়েছিলো। বর্তমানে ছাত্রদল যে দাবি করছে তাকেও প্রশাসন অযৌক্তিক মনে করেই বাতিল করেছে।”

ছাত্রলীগের প্যানলের বিষয়ে রাব্বানী বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি থেকে ফিরলে তার সঙ্গে আলোচনা করেই প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে।

একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র দাবি বামদের

হলে অবস্থানরত ও সংযুক্ত শিক্ষার্থীর ভোটের 'সুরক্ষায়' ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট 'প্রগতিশীল ছাত্রজোট' ও 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য'।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস ও আসন্ন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে 'উদ্ভুত পরিস্থিতি'তে এ দুই জোটের যৌথ ঘোষণা ও দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।

তাদের দাবিগুলো হল- ১. ক্যাম্পাস ও হলগুলকে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত করে সংগঠনগুলোর সহাবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ২. গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতন বন্ধ এবং আগের সকল নির্যাতনের বিচার করা, ৩. প্রয়োজন ও মেধার ভিত্তিতে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষ থেকেই বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা, ৪. ডাকসু ও হল সংসদ ফি প্রদানকারী শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, ৫. হলে অবস্থানরত ও সংযুক্ত সকল শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার সুরক্ষায় ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনসমূহে স্থাপন করা ও ৬. শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা, নির্বাচনী সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের বাধাসহ আচরণবিধি অগণতান্ত্রিক বিধানসমূহ বাতিল করা।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর। তিনি 'সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচনের জন্য' তাদের উত্থাপিত দাবি পূরণের প্রশাসনের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীক, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা প্রমুখ।