বুধবার সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, “ডাকসু নির্বাচন হবে, এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, ইতিবাচক চিন্তা করছি এবং ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই।
“সাথে সাথে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূরণ করবে, সে বিষয়ে আমরা আন্তরিক ও আত্মবিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, তারা অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে মেনে নেবে।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তফসিল পেছানো বা গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো সুযোগ এখন আর নেই।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ; যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৩ মার্চ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৫ মার্চ।
দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়া ছাত্রদলের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্যই ভোট পেছাতে হবে।
এই দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা সাত দফা দাবি দিয়েছি। তফসিল তিন মাস পেছানো, রাজনৈতিক সহাবস্থানটাকে স্থিতিশীল করা…।
“আজকে প্রথম (মধুর ক্যান্টিনে) এসেছি, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে সহযোগিতা করবে, সহাবস্থানটা স্থিতিশীল হবে। একটি সামগ্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করবে এবং তারপর ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।”
প্রার্থী ঠিক করার বিষয়ে এক প্রশ্নে রাজীব আহসান বলেন, “ভোটার তালিকায় আমাদের যারা অন্তর্ভুক্ত আছে এবং রাজনৈতিকভাবে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। আমরা পুনঃতফসিল দাবি করছি এখনো। তারপর আমাদের প্রার্থী তালিকা বা অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করব।”
নয় বছর পর মধুর ক্যান্টিনে আসার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, “আমরা মনে করি, ডাকসুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক ও গণতান্ত্রিক যে রাজনীতির সূচনা হয়েছে, আজকে এই পথচলার যাত্রা শুরু। আমাদের এই ক্যাম্পাসে অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
“আমরা চাই, ছাত্র রাজনীতির অতীত গৌরব এবং পরমত সহিষ্ণুতা ও সবার সহাবস্থানের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকুক।”
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সংগঠনের ১০ জন নেতা বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে ঢোকেন। পরে আরও জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
দীর্ঘদিন পর বড় দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মধুর ক্যান্টিন এদিন ছিল সরগরম; দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানও দিতে দেখা যায় এ সময়।
ছাত্রদলের দুই নেতা মধুর ক্যান্টিনে ঢুকেই আগে থেকে সেখানে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সাদ্দাম তাদের বসার চেয়ার দেখিয়ে দেন।
ক্যান্টিনে অন্য টেবিলে বসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি তুহিন কান্তি দাসের সঙ্গেও করমর্দন করেন ছাত্রদলের দুই নেতা।
২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। ওই বছর ২১ জুন মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার চেষ্টা করে ফের ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। পরের বছর একবার মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের অগাস্টে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ডাকা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে মধুর ক্যান্টিনে আসার পথে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের।
দীর্ঘ দিন পর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে স্বাগত জানালেও তাদের নেতৃত্ব সাধারণ ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়ার শর্ত দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
“ছাত্র সংগঠন হিসাবে বলতে চাই, আপনারা সম্মেলন করে সাধারণ ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন। তা না হলে যে বিষয়টা হবে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না এবং সাধারণ ছাত্ররা আপনাদের বয়কট করবে।”
শোভন বলেন, “ছাত্রদল এতোদিন মধুতে না এসে আমাদের দোষারোপ করেছে। কিন্তু তারা আজকে এসে বুঝতে পারল, আমরা কারও বাধা না, আমরা আমাদের নিজেদের রাজনীতি করি, যার যার রাজনীতি সে সে করবে।
“এতোদিন পরে এসেছে সেটা ঠিক। আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, ডাকসু নির্বাচন করতে হবে।”
এখন ‘কে ছাত্রদল, কে ছাত্রশিবির সেটা বোঝা যায় না’ মন্তব্য করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, “আমরা দেখছি, ক্যাম্পাসে শিবির নিষিদ্ধ হলেও তারা ছাত্রদলের ব্যানারে রাজনীতি করছে। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা চাই, ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু রেখে তারা যেন ডাকসু নির্বাচনটা করে।”
ছাত্রদলের পুনঃতফসিলের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত হয়েছে৷ এখন তফসিল পেছানো বা গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো সুযোগ নাই।”