মধুর ক্যান্টিনে পাশাপাশি ছাত্রদল ছাত্রলীগ

ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে দীর্ঘদিন পর দল বেঁধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এসেছেন বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা; ছাত্রলীগ ও বাম জোটের নেতারাও আছেন পাশের টেবিলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2019, 06:31 AM
Updated : 13 Feb 2019, 07:52 AM

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সংগঠনের ১০ জন নেতা বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে ঢোকেন। পরে আরও জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

ছাত্রদলের দুই নেতা মধুর ক্যান্টিনে ঢুকেই আগে থেকে সেখানে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সাদ্দাম তাদের বসার চেয়ার দেখিয়ে দেন।

পাশাপাশি টেবিলে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ

ক্যান্টিনে অন্য টেবিলে বসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি তুহিন কান্তি দাসের সঙ্গেও করমর্দন করেন ছাত্রদলের দুই নেতা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানও মধুর ক্যান্টিনে এসে অন্যদের সঙ্গে যোগ দেন। আধঘণ্টা পর সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে তারা চলে গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতাকর্মীরা ভেতরে থেকে যান।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের অগাস্টে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ডাকা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে মধুর ক্যান্টিনে আসার পথে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। 

বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ঢোকার সময় ছাত্রদলকে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। তবে সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসীমউদ্দিন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুরোটা সময় মধুর ক্যান্টিনের বাইরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের সংগঠনের নামে স্লোগান দিয়ে গেছেন। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের দাপটে ছাত্রদল কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে।

২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। ওই বছর ২১ জুন মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার চেষ্টা করে ফের ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। পরের বছর একবার মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতবছর ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন শুরু করলে ছাত্রদলের ফেরার পথ তৈরি হয়।

গত সেপ্টেম্বরে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে এসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসানের আলিঙ্গনের বিরল দৃশ্য দেখা যায়।

এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের কয়েকশ নেতাকর্মী দীর্ঘদিন পর কোনো ধরনের বাধা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন দল বেঁধে।

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছিল ছাত্রদল। ২ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ন্যূনতম তিন মাস সব সংগঠনের সহাবস্থান ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিছিল তারা।

তবে তাদের ওই সময় না দিয়েই গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ; যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৩ মার্চ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৫ মার্চ।