ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিল ‘উত্তীর্ণরা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটের প্রশ্নবিদ্ধ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে নতুন করে পরীক্ষায় বসলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2018, 04:37 PM
Updated : 16 Nov 2018, 04:40 PM

শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ১৯টি কেন্দ্রে এক ঘণ্টার এই এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। এবার পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফেরত নেয় কর্তৃপক্ষ।

পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ, ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নিয়ম থাকায় পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে কয়েকজন ভর্তিচ্ছুকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এ নিয়ে কলা ভবনের মূল ফটকে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

তারা জানান, কেন্দ্রে ঢুকতে না পেরে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় কাচ ভেঙে পড়ে এক শিক্ষার্থী আহত হন; ধাক্কাধাক্কিতে এক অভিভাবকও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

ভর্তি পরীক্ষা শেষে আল জুবায়ের হক মাসুম নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, “এবারের প্রশ্নপত্র বেশ কঠিন হয়েছে। বেশি কঠিন হয়েছে সাধারণ জ্ঞান অংশের আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী। প্রশ্ন রেখে দেওয়ায় উত্তর মেলাতে পারছি না। ভর্তির সুযোগ পাব কিনা বলতে পারছি না।”

প্রশ্নপত্র রেখে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন,  “এটা ভর্তি পরীক্ষা সমন্বয়কারী কমিটির সিদ্ধান্ত। এখন থেকে প্রতিবছর প্রশ্নপত্র রেখে দেওয়া হবে।”

সার্বিক বিষয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টায় পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ছিল। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে।”

‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম দফা ভর্তি পরীক্ষা হয় গত ১২ অক্টোবর। সেদিন পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায় ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম ১০০ জনের তালিকায় থাকা অন্তত ৭০ জন ভর্তিচ্ছু অন্য ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণই হতে পারেননি। 

আইন বিভাগের এক ছাত্র ফল বাতিলের দাবিতে অনশন শুরু করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সরব হয়ে ওঠেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদও ‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিলের দাবিতে সংহতি জানায়। 

ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হওয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা ফল বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও নতুন করে পরীক্ষা নেওয়াসহ চার দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়। এর মাঝে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে ঘোষিত ফলাফলে উত্তীর্ণ ১৮ হাজার ৪৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নতুন করে পরীক্ষা করার ঘোষণা দেয়  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে এক হাজার ৬১৫ জন শেষ পর্যন্ত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এই ইউনিটের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।