তিনি বলেছেন, “দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি শেখার বিষয়টি এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।”
কূটনৈতিক পেশা থেকে রাজনীতিতে আসা মাহমুদ আলী শুক্রবার কথা বলছিলেন ‘প্রায়োগিক কাজে সুনির্দিষ্ট ইংরেজি’ শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন ধারণা খুঁজে নিতে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।
‘ইংলিশ ফর স্পেসিফিক পারপাজেস: কুড উই বি মোর স্পেসিফিক’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সম্মেলনে যোগ দিতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন দেশের তাত্ত্বিক, পেশাজীবী, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, এনজিওকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা ও করপোরেটের অংশীজনরা।
এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) সেন্টার ফর ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজের সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেটসংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য দেশের তরুণদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে যাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় পরিসরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্যও ‘প্রয়োজনভিত্তিক’ ইংরেজি জানা তরুণদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
বৈচিত্র্যময় চাকরির বাজারের জন্য ইংরেজি ভাষার ওপর যে ধরনের দখল দরকার, তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখা ইংরেজির বিপুল ব্যবধানের বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই দূরত্ব ঘোচাতে চিকিৎসা, প্রকৌশল, কূটনীতিসহ আলাদা আলাদা পেশার জন্য উপযোগী করে ইংরেজি শিক্ষার আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন তিনি।
আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনারা জাতির সামনে হাজির করেছেন, তা সফল হোক। ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও শেখানোর ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা এই সম্মেলনের মাধ্যমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে তৈরি হতেও ভূমিকা রাখবে।”
পাঠক সংখ্যার বিচারে দেশে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা দ্বিভাষিক এই ইন্টারনেট সংবাদপত্রের সম্পাদক বলেন, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সংবাদ প্রকাশের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এমন সম্পাদক ও প্রতিবেদক প্রয়োজন, যাদের ভাষার ওপর দখল ভালো। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এমন কর্মী চায়, যারা দুটো ভাষাতেই দক্ষ।
“কিন্তু তেমন কর্মী খুঁজে পাওয়া সবসময়ই কঠিন। কোথাও একটি গলদ নিশ্চই আছে। একই ধরনের সমস্যায় পড়ার কথা আমি আমার উদ্যোক্তা বন্ধুদের কাছেও শুনেছি।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, যারা কল সেন্টার পরিচালনা করেন, অন্য দেশের সঙ্গে যাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়, তাদেরও যথাযথ ইংরেজি জানা লোক পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ‘ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি’ খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানেও একই সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন।
“মূল বিষয়টি হল, কোথাও একটি গলদ রয়েছে যেটা আমাদের সংশোধন করা দরকার। আর এ কারণেই আমরা আজ এই সম্মেলনে।”
তিনি বলেন, একজন কূটনীতিবিদের যে ধরনের ইংরেজি জানা দরকার, একজন বৈমানিক বা বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রে তার ধরনটা এক নয়। প্রতিটি পেশার জন্যই ইংরেজি ভাষার ওপর আলাদা ধরনের দখল থাকতে হয়।
“আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের যদি আমরা সফল পেশাজীবী হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে চাই, তাহলে তাদের যা প্রয়োজন, আর আমরা যা শেখাচ্ছি, তার মধ্যে ব্যবধানটা আমাদের দূর করতে হবে।”
ইউল্যাবের ট্রাস্টি বোর্ডের বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুফল ঘরে তুলতে ইংরেজি ভাষার ওপর শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের বড় ধরনের নীতি সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি পড়ে আসছে। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম বর্ষ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ পর্যন্তও তাদের নতুন করে ইংরেজি শেখাতে ব্যয় করছি। এটা সময়ের অপচয়।”
চাকরি বাজারের চাহিদার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষার মানের যে তফাত, সে বিষয়টি অধ্যাপক ইমরানের কথাতেও আসে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাইভা নিতে গেলে প্রথম যে বিষয়টি ভাবতে হয়- এরা ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ঠিকমত বুঝতে পারবে কি-না, সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারবে কি-না।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইমরান বলেন, “ভবিষ্যতে সব শিক্ষা হবে স্ক্রিন বেইজড; এটা ট্যাব, মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে হতে পারে। এখন শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তোমাদেরকে আমাদের কাছে আসতে হবে না। তোমরা নিজেরাই শিখতে পারো।”
পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রাশিদ খান, সহ সভাপতি আরিফা রহমান, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক (এক্সামিনেশনস) সেবাস্টিয়ান পিয়ার্স, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের প্রেসিডেন্ট ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফ, অস্টিউট হর্সের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন, রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (মিডিয়া, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি) ইকরাম কবীর, ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেসের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ‘ইংলিশ ফর স্পেসিফিক পারপাজেস’ বিষয়ে মোট ২৯টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।