দেশেই বিশ্বমানের শিক্ষার প্রতিশ্রুতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির

উত্তর আমেরিকার আদলে প্রায়োগিক শিক্ষা আর ক্যাম্পাসে নানা সুবিধার সমাবেশ ঘটিয়ে দেশেই ‘আন্তর্জাতিক মানের’ শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2018, 04:04 AM
Updated : 4 Sept 2018, 04:09 AM

দুই বছর হতে চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান আর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা আর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আমরা কানাডার মানের টিউটোরিয়াল ভিত্তিক প্রয়োগধর্মী শিক্ষা দিচ্ছি।”

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কার্যক্রম এখন চলছে রাজধানীর বনানী-১১ নম্বর সড়কের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ঢাকার পূর্বাচলে তিন একর জমিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস।

তিনটি স্কুলের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আটটি প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী এখন লেখাপড়া করছেন। প্রোগ্রাম অনুযায়ী সেমিস্টার ফি ৩০ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

এর মধ্যে সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; বিজনেস স্কুলের অধীনে বিবিএ, এমবিএ ও এক্সিকিউটিভ এমবিএ এবং লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স স্কুলের অধীনে ইংরেজি, আইন ও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ রয়েছে এখানে।

এসব বিভাগে দুই ঘণ্টার ক্লাসের সঙ্গে দুই ঘণ্টার টিউটোরিয়াল ক্লাস অন্তর্ভুক্ত থাকে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “টিউটোরিয়াল ক্লাসে দলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ পর্যালোচনার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে সেটি প্রয়োগের জ্ঞান পাচ্ছে।”

একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “হয়ত আমি বিজনেস স্টাডিজ পড়াচ্ছি, সেক্ষেত্রে টিউটোরিয়াল ক্লাসে গিয়ে বর্তমান সময়ের একটা কেস স্টাডি দিচ্ছি, তারপর তাকে কিছু প্রশ্ন করছি। যেগুলোর সে উত্তর দেবে।

“আগের ক্লাসের উপর ভিত্তি করে কোনো ডিভাইস তৈরি করতে দিচ্ছি বা সেটা দিয়ে কাজ করতে দিচ্ছি। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও নিজেদের মধ্যে কো-অপারেট করতে পারছে। সেখানে শিক্ষক তাদেরকে সহায়তা করছে। আবার টিউটোরিয়াল ক্লাসের প্রথম অংশে রিভিশন পার্ট থাকে।”

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষা কাঠামো দাঁড়িয়েছে, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ তাতে পরিবর্তন আনতে চাইছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিখবে। এখন যেটা হচ্ছে, বইকেন্দ্রিক পড়াশোনা হচ্ছে। মুখস্ত করে লেখা হচ্ছে। আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।”

অধ্যাপক মাহফুজ বলেন, বিবিএ-তে এখনও আগের জটিল বিজনেস মডেলগুলো পড়ানো হয়। মার্কেটিংয়ে অনেক পলিসি এখনও পড়ানো হয় যেগুলো বর্তমানে অচল। অথচ এখন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সময় চলছে। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনে এনিমেটেড ফিল্ম, ভার্চুয়াল রিয়ালিটির বিষয় চলে এসেছে।

“আমরা সেসব নতুন বিষয়ে জোর দিচ্ছি। অভিনয় করে করে ভিডিও রেকর্ড করার সময় কিন্তু এখন না। আমরা সেজন্য গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের বিষয় মাথায় রেখে বর্তমান বাস্তবতার উপর জোর দিতে চাইছি।”

আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া থেকে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছেন নিমো মোহাম্মেদ আবদি। তিনি বলেছেন, ‘টিউটোরিয়াল ভিত্তিক’ হওয়ায় এখানকার শিক্ষা কার্যক্রম খানিকটা আলাদা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগও বেশি বলে তার মনে হয়েছে।

৩০ জন দেশি-বিদেশি শিক্ষকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আতিউর রহমান ভার্চুয়াল ডিন হিসাবে রয়েছেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক উইলিয়াম এইচ ডেরেঙ্গার বলেন, “শুরু থেকেই বৈশ্বিক একটা অবস্থান আমাদের রয়েছে। টরন্টোতে আমাদের যে অফিস, সেটা এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও যুক্ত।”

বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশি-বিদেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা থাকার কথাও জানান অধ্যাপক ডেরেঙ্গার।

“অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসাবে কাজ করছি আমরা। কানাডায় এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা আর কানাডা থেকে শিক্ষার্থী আনার ব্যবস্থাও আমরা করতে পারব।”

উপাচার্য মাহফুজ জানান, কানাডার কিংস ইউনিভার্সিটি কলেজ, জর্জিয়ান ইউনিভার্সিটি, ল্যাম্বটন কলেজ, কানাডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ট্রেইনিং, সিঙ্গাপুরের ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট এবং চীনের লিয়াওনিং কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক রয়েছে তাদের। এর আওতায় ক্রেডিট ট্রান্সফার ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরির সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়েস্টিন হোটেল, এফবিসিসিআই, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইডিআরএ, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ওয়ালটন এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান উপাচার্য। 

তিনি বলেন, ইংলিশ ক্লাব, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, ল ক্লাব, ফিল্ম ক্লাব এবং ড্রামা ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের অধীনে বছরব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

এ প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষার্থী মারুশা আহমেদ বলেন, “কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস আমাদেরকে নানামুখী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের জন্য মেধার ভিত্তিতে বিশেষ বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেওয়ার কার্যক্রম চালু রেখেছে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শর্তহীন বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হন। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সিজিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিবেচিত হন ১০০ শতাংশ বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য হিসাবে।

এছাড়া গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা উপবৃত্তির পাশাপাশি টিউশন ফির ক্ষেত্রে শতভাগ ছাড় পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।