বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৪ জন।
সেই হিসেবে এক বছরেই প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ডাকসু ও হল সংসদের নামে আদায় করা হয়। ২৭ বছরে শিক্ষার্থী ও চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে হিসেব করলেও এই অর্থের পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
১৯৯০ সালের পর আর ডাকসু কিংবা হল ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হলেও ফি কিন্তু দিতেই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
কিন্তু এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে, তার কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি কর্তৃপক্ষের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকসু না থাকলেও এসব অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও হল পর্যায়ে নানা খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়।”
ভিন্ন কথা বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসু না থাকায় কার্যত অচল হয়ে আছে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। ডাকসুর চাঁদা হিসেবে নেওয়া অর্থ কোথায় ব্যয় হয়, সেই সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।
ডাকসুর কার্যক্রম না থাকলেও প্রতিবছর ডাকসুর কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় খাতে বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ বরাদ্দ রাখে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডাকসু নির্বাচন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ তেও একই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ ছিল।
গত ২৭ বছরে গড়ে কমিয়ে ধরলেও এই টাকার পরিমাণ হয় ১ কোটি টাকার মতো।
নির্বাচন তো হচ্ছে না, এই অর্থ তাহলে কোথায় ব্যয় হচ্ছে- জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল বলেন, “বরাদ্দকৃত টাকা খরচ না হলে সেই টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা হয়।”
“তবে ঠিক কোন খাতে ব্যয় করা হয়, সেটির কোনো রেকর্ড নেই,” বলেন তিনি।
নির্বাচনের মতো ডাকসু ও হল সংসদের অভিষেকের জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়, সেই অর্থের বিষয়েও একই উত্তর আসে কর্তৃপক্ষের।
অধ্যাপক কামাল মনে করেন, ডাকসু মনোনীত প্রতিনিধিরা থাকলে এসব কাজে আরও স্বচ্ছতা আসত।
ভবনও বেহাল
নির্বাচন না হতে হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় দপ্তরগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে ডাকসু।
কলা ভবনের পাশে ডাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, দোতলার অবস্থা জীর্ণ-শীর্ণ। সহ-সভাপতির (ভিপি) রুমে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে আছে তালা, এর চাবি কার কাছে আছে জানতে চাইলে ডাকসুর প্রধান ও একমাত্র কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের কাছে চাবি আছে।
তবে দীর্ঘদিন অব্যবহারের কারণে কোষাধ্যক্ষও চাবির হদিস দিতে পারেননি।
সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) কক্ষটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে পুরনো চেয়ার-টেবিলের ভগ্নাংশ এবং পুরনো পত্রিকা রাখার জন্য। অন্যান্য কক্ষগুলোর অবস্থাও প্রায় এক।
তবে কিছু কক্ষ এখনও ব্যবহৃত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা, পত্রিকা পাঠ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মহড়ার জন্য।
ডাকসু ভবনে ঢোকার মুখেই একটি কক্ষ ব্যবহার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক তরুণ সরকার।
আট বছর আগে তিনি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কাছ থেকে ‘ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি’র গবেষণা কাজে এই কক্ষটি ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন।
ডাকসুর কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে কাজ করছেন তরুণ সরকার।
এ বিষয়ে তরুণ সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিককে দেখিয়ে দেন।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা কয়েকবার তাকে (তরুণ সরকার) রুম ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দিয়েছি। কিন্তু তিনি ছাড়েননি। আমরা আবার ব্যবস্থা নেব।”