২১ দিনেও ক্লাসে ফেরেনি বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের শাস্তিসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২১ দিনেও ক্লাসে ফেরেনি।

তারেক হাসান নির্ঝরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 05:03 AM
Updated : 19 Nov 2017, 05:03 AM

বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ‘বহিরাগত তাড়ানোর অভিযানের’ মধ্যে গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দেশে প্রকৌশল শিক্ষার সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় আহত হন বুয়েটের পাঁচ ছাত্র।

এরপর দোষীদের বিচারসহ আট দফা দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও ল্যাব বর্জন করে আসছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। গত ৩০ অক্টোবর তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বুয়েট প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেন।

আন্দোলনরত  শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমন্বয়ক যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতীম দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রশাসন তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে বারবার ক্লাসে ফেরার নোটিস দিচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ দাবি তারা এখনও পূরণ করেনি।

“আমাদের বারবার আশ্বাসই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে আমরা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

বুয়েটের চার হাজার শিক্ষার্থী এই আন্দোলনের সঙ্গে আছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা ক্লাসে যাচ্ছি না, ফলে ক্ষতিটা আমাদেরই হচ্ছে। আশা করি উপাচার্য মহোদয় এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।”

সংঘর্ষের ওই ঘটনার পর বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বুয়েটের এক কর্মচারীর ছেলে রাজুসহ কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। পুলিশ তখন রাজুকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আলাদা তদন্ত কমিটি করা হয়। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো পক্ষই এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক আব্দুর রহিমকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

কমিটির সদস্যরা গত ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর এবং ৬ ও ৭ নভেম্বর বৈঠক করে প্রত্যক্ষদর্শী, হলের কর্মচারী এবং সাধারণ ছাত্রদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আরও সময় লাগবে। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। বুয়েট শিক্ষার্থীরা মারামারির সিসিটিভি ফুটেজের একাংশ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ায় জটিলতা আরও বেড়েছে।”

বুয়েট কর্তৃপক্ষ ঘটনার সম্পূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনার উৎপত্তিস্থল যেহেতু বুয়েট ক্যাম্পাস, সেহেতু মূল দায়িত্ব বুয়েট কর্তৃপক্ষের। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হল সেটা তারা ভালো বলতে পারবেন। আমরা আমাদের স্টুডেন্টদের কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি।”

এক্ষেত্রে দোষীদের শাস্তির চেয়ে ‘প্রতিকারমূলক’ ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছেন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ভবিষ্যতে নতুন করে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ এড়াতেই তারা এটা করতে চাচ্ছেন।

ঘটনার পর ২১ দিনেও কেন তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আশা করি শিগগিরই রিপোর্ট দেওয়া হবে।”

অন্যদিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের বারবার ক্লাসে ফিরে যাওয়ার নোটিস দিলেও তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। 

তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ ব্যাপারে জানি না। এটা রেজিস্ট্রারের অধীনে। উনার সাথে যোগাযোগ করুন।”

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটির ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আছেন, উনি এসব বিষয় দেখেন।”

ছাত্রকল্যাণ পরিচালকই রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন- এমন তথ্য জানালে অধ্যাপক সাইদুর বলেন, “এ বিষয়ে আমার কথা বলার এখতিয়ার নেই।”

সরাসরি দেখা করে তদন্তের ব্যাপারে কথা বলতে রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের অফিসে গেলেও সাংবাদিক পরিচয় শুনে দেখা করতে চাননি তারা।

সার্বিক বিষয়ে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তার দপ্তর থেকে ‘দেখা করার কারণ’ জেনে নিয়ে বলা হয়, উপাচার্য ‘ব্যাস্ত আছেন’।