শনিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান সেমিনার কক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: একজন প্রতিবাদী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
লিখিত প্রবন্ধে অধ্যাপক মান্নান বলেন, “সত্তরে নির্বাচনের পর এটি মীমাংসিত ছিল পাকিস্তানের শাসনভার বঙ্গবন্ধু তথা শেখ মুজিবের হাতে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক আমলারা মানবে কেন? পুনরায় শুরু হলো বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।
“.... ইয়াহিয়ার প্ররোচনায় ভুট্টো বললেন সংবিধানের বিষয়টা সংসদের বাইরে ফয়সালা হতে হবে।...বঙ্গবন্ধু সাফ জানিয়ে দিলেন, যা হয় তা সংসদে হবে। ভুট্টোর কাছে তা ছিল অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি বলেন, “পরে বৈঠকের নাটক করে পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনী নিয়ে আসে, সংসদ অধিবেশন স্থগিত করে দিলে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে ভাষণ দেন। পরে ২৫ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “২৫ মার্চ রাতে শুরু হলো ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হলেন, নিয়ে যাওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। মুখোমুখি করা হলো সামরিক আদালতে বিচারের নামে প্রহসনের। বঙ্গবন্ধু একটু আপস করলেই মুক্তি ছিলে নাগালের মধ্যে। কিন্তু তিনি আপস করেননি।”
বঙ্গবন্ধু কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সাড়ে তিন বছরে তার কীর্তি বাংলার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে যেই বিষয়টায় তার সর্বক্ষণিক দৃষ্টি ছিল, সেটি হচ্ছে প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করা। তিনি কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি। প্রয়োজনে তিনি দলের সংসদ সদস্যদের প্দত্যাগ করতেও বাধ্য করেছেন।”
তিনি বলেন, “আজকাল সবাই নেতা হতে চান, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত ছিলেন কর্মী। তিনি ছাত্রলীগকে অনেক বেশি সময় দিয়েছেন এবং ছাত্রলীগকে দাঁড় করিয়েছিলেন।”
নতুন প্রজন্ম ইতিহাস বিমুখ হয়ে পড়েছে জানিয়ে অধ্যাপক মান্নান বলেন, “বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস বিমুখ হয়ে পড়েছে। তারা ইতিহাস জানার প্রয়োজন মনে করেনা। আর আমরাও জানানোর প্রয়োজন মনে করি না। আমাদের সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
“যত বেশি নিজের দেশের ইতিহাস জানবে, ততো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ইতিহাস চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে।”
ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি মুনতাসির মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবর রহমান।