“আপাতত প্রত্যয় স্কিম বাতিল; সরকার চাইলে পরবর্তীতে করতে পারবে,” বলেন পেনশন কর্তৃপক্ষের এক সদস্য।
Published : 04 Aug 2024, 01:10 AM
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনের যে ‘প্রত্যয়’ স্কিমকে বৈষম্যমূলক দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন, সেই পুরো স্কিমই বাতিল করেছে সরকার।
শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে সভা শেষে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের জন্য স্কিমটি তৈরি করা হয়েছিল, তাদের তো প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই আপাতত প্রত্যয় স্কিম বাতিল। সরকার চাইলে পরবর্তীতে করতে পারবে।”
সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করে সরকার। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দেবেন, তাদের প্রত্যয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা এ নিয়ে আন্দোলনে নামলে বিষয়টি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, গত ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এর পরে চাকুরিতে আসা ব্যক্তিদের এ স্কিমের আওতায় আসতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, ১ জুলাই ২০২৪ বা তার পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রীও তার বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি বলেন।
তবে এ নিয়ে পরে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক দাবি করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। পরে তা এক বছর পেছানো হলেও পুরোপুরি বাতিলের দাবি ছিল তাদের।
এ নিয়ে গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠক করেন। আপত্তির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমে কিছু সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথা জানান।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ-কর্মসূচির দিন শনিবার পুরো স্কিমই বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিমসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।”
শিক্ষকরা এ স্কিমকে বৈষম্যমূলক দাবি করে যুক্তি দিচ্ছিলেন, এখন যে আনুতোষিক পাওয়া যায়, প্রত্যয় স্কিমে তা নেই। চাকরিজীবী এবং তার নমিনি এখন আজীবন পেনশন পান, প্রত্যয়ে যুক্ত হলে সেটাও কমবে।
বর্তমান নিয়মে পেনশনাররা মাসে চিকিৎসা ভাতা, দুটো উৎসব ভাতা পান, একটি বৈশাখী ভাতা পান, প্রত্যয়ে সে ব্যবস্থা নেই। এখনকার মত ইনক্রিমেন্টও নেই।
বর্তমানে দেশে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মত প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) এর আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, পেনশন পান না।