তরঙ্গ নিলামের আগে ‘আলোচনার অনুরোধ’ জিএসএমএ’র

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ‘প্রকাশ্য আলোচনার মাধ্যমে’ অব্যবহৃত তরঙ্গের নিলাম আয়োজনের আহবান জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের আন্তর্জাতিক সংগঠন জিএসএমএ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2015, 03:35 PM
Updated : 19 Feb 2015, 03:35 PM

সংগঠনটির পক্ষ থেকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিটিআরসি এর চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার গ্রামীণফোনের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছে থাকা ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের অব্যবহৃত ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। সে অনুযায়ী খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে ও নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

ওই তরঙ্গ ৫ মেগাহার্টজ ও ৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজে ভাগ করে নিলামে বিক্রি করার কথা বলা হয় প্রস্তাবে।

বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, অপারেটরদের মধ্যে যাদের আগের তরঙ্গ ফি বাবদ রাজস্ব বকেয়া আছে এবং যারা আগেই ২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে তারা প্রাথমিকভাবে ১ ৮০০মেগাহার্টজের নিলামে অংশ নিতে পারবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

৯০০ ও ১ ৮০০ মেগাহার্টজ মিলে অপারেটরদের মধ্যে কেবল গ্রামীণফোনের হাতেই ২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ আছে। বিটিআরসির করা খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেলে গ্রামীণফোন আর আসন্ন নিলামে অংশ নিতে পারবে না।

টুজির ৯০০ ও ১ ৮০০ মেগাহার্টজ এবং থ্রিজির ২১০০ মেগাহার্টজ মিলিয়ে গ্রামীণফোনের হাতে মোট তরঙ্গ রয়েছে ৩২ মেগাহার্টজ। এছাড়া বাংলালিংক ২০ মেগাহার্টজ, রবির ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ ও এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিয়ে সেবা দিচ্ছে।

রাষ্ট্রায়াত্ব টেলিটকের হাতে রয়েছে ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। আর থ্রিজির ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এখনো অবিক্রিত রয়েছে।

২০ মেগাহার্টজের বেশি তরঙ্গ রয়েছে এমন অপারেটরদের এই নিলামে না রাখার শর্তে যুক্তি হিসাবে মনোপলি নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছে বিটিআরসি, যা নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গ্রামীণফোন।

একইসঙ্গে নিলাম আয়োজনের আগে থ্রিজি নিলামের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের’ সামাধান দাবি করেছে ৫ কোটির বেশি গ্রাহকের এই মোবাইল অপটারেটর।

গ্রামীণ ফোনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে জিএসএম মোবাইল প্রযুক্তির মান নির্ধারণ, স্থাপন এবং প্রচারে সহযোগিতা দিয়ে আসা জিএসএমএ বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল ডেটা সেবা বিস্তারে অতিরিক্ত তরঙ্গ অবমুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং নতুন তরঙ্গ বরাদ্দে স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে।

জিএসএম এর হেড অফ পলিসি জন জিউস্টি ওই চিঠিতে ‘যথাযথ ও প্রকাশ্য’ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিলামের খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করার আহবান জানিয়েছেন বলে গ্রামীণ ফোনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। 

গ্রামীণফোনের সিইও রাজীব শেঠি বলেন, “আমরা সকলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নিলামের দাবি জানিয়ে আসছি। আরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কর্তৃপক্ষের সে পথটিই অনুসরণ করা উচিত যাতে এই শিল্প এবং দেশ উভয়ই উপকৃত হয়।”

খসড়া নীতিমালায় ‘বৈষম্যমূলক’ শর্ত থাকার কথা উল্লেখ করে গ্রামীণফোনের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর গ্রুপ এশিয়া অঞ্চলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অফ বিজনেস এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট হাকন ব্রুয়াসেট জল বলেন, “বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে আইন-কানুন ও কর নীতির ক্ষেত্রে অনুমানযোগ্য পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে। যখন সে রকম পরিবেশ হবে তখনই তরঙ্গ নিলাম হওয়া উচিৎ।”

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন ব্যবহার বলে গ্রামীণফোনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।