জিএমজি: হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

তিন বছর ধরে বন্ধ জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে বিমানের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সিগুলো আটকে থাকায় বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একজন বেসামরিক বিমান বিশেষজ্ঞ।

আশিক হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2015, 03:38 PM
Updated : 10 Jan 2015, 03:38 PM

বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহেদুল আলমের হিসাবে, ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সিগুলো অলস পড়ে থাকায় প্রতিবছর দেশের প্রায় দুই হাজার ২৮ কোটি টাকা বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে এয়ারলাইন্সগুলো দেশের বাইরে নির্দিষ্টসংখ্যক ফ্লাইট চালাতে পারে। জিএমজি ফ্রিকোয়েন্সিগুলো বরাদ্দ নিয়ে অলস ফেলে রাখায় অন্য এয়ারলাইন্সগুলো সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে না।

“প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে এয়ার ট্রাফিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি নির্দিষ্ট থাকায় সুযোগ পেয়েও দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের সেবা দিতে পারছে না।”

২০১৪ সালের ২০ মে হালনাগাদ করা বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সির সর্বশেষ তালিকা অনুসারে, ১০টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানোর জন্য জিএমজির নামে বরাদ্দ রয়েছে মোট ৮১টি ফ্রিকোয়েন্সি। এর আওতায় আন্তর্জাতিক রুটে সপ্তাহে ৮১টি ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা। কিন্তু এর দুবছর আগে জিএমজির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেবিচক।

ওয়াহেদুল আলমের মতে, এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

“যদি একটি সরল অংক করা যায়, এ ক্ষতির পরিমাণ বের করা সম্ভব। সপ্তাহে ৮১টি ফ্রিকোয়েন্সিতে যাওয়া আসা মিলিয়ে যদি প্রত্যেক ফ্লাইটে ১০০ জন করে যাত্রী ধরা হয় তাহলে মোট যাত্রীর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৬ হাজার। প্রতিজন যদি ৫০০ মার্কিন ডলার করেও খরচ করেন তাহলে প্রতি সপ্তাহে এটি হবে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

“বছরের হিসেবে এটি হবে ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় দুই হাজার ২৮ কোটি টাকা।”

বেবিচকের তালিকা অনুসারে, বিমান যোগাযোগ থাকা ১৬টি দেশের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের বরাদ্দ পাওয়া ফ্রিকোয়েন্সিগুলো পাঁচটি বিমান সংস্থাকে পুনর্বণ্টন করা হয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও রয়েছে।

ভারতের সঙ্গে উড়োজাহাজ চলাচল চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের পাওয়া ফ্রিকোয়েন্সির সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে বিমানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১টি, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ পেয়েছে ১৫টি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বরাদ্দ পেয়েছে সাতটি। এছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে নতুন লাইসেন্স পাওয়া নভো এয়ার  ১০টি ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে একটিও পায়নি।

বেবিচক বলছে, ভারতের বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য জিএমজির নামে ২১টি ফ্লাইট বরাদ্দ থাকায় রিজেন্টের চাহিদা অনুযায়ী আরো সাতটি এবং নভো এয়ারের ১০টি প্রস্তাব বিবেচনা করা যায়নি। 

বন্ধ থাকা বিমান সংস্থা জিএমজির নামে সিঙ্গাপুর রুটে তিনটি, থাইল্যান্ডে পাঁচটি, মালয়েশিয়ায় সাতটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১টি, কাতারে তিনটি, ওমানে সাতটি, সৌদি আরবে সাতটি, বাহরাইনে তিনটি এবং চীনে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য চারটি ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

জিএমজির নামে বরাদ্দ থাকায় থাইল্যান্ডে ১০টি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি চাইলেও পাঁচটি বরাদ্দ পেয়েছে নভোএয়ার। আর ওমানে ফ্লাইট চালানোর জন্য সাতটি ফ্রিকোয়েন্সি চেয়ে একটিও পায়নি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।

১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কার্যক্রম শুরু করা জিএমজি এয়ারলাইন্স ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। ২০০৯ সালে এয়ারলাইন্সটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ।

বকেয়া দুইশ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় ২০১২ সালেই জিএমজির লাইসেন্স বাতিল করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

একই বছর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জিএমজির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাব সাত্তারের নামে এ বিষয়ে একটি আবেদন দাখিল করা হয় ।

এ মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল আনাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে মামলা চলমান থাকায় আমাদের কিছু করার নেই। শুনানির জন্য মামলার তারিখ পড়ছে না।

“শুনানির তারিখ নির্ধারণ হলে আমরা আশাবাদী যে পজিটিভ কিছু একটা হবে।”

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অব্যাহতভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে অপারেশন বন্ধ রেখেছে। নতুন পরিকল্পনাসহ প্রতিষ্ঠানটি আবার ফিরে আসবে।

ততদিন পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর বরাদ্দ যাতে বাতিল না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে আদালতকে অনুরোধ জানায় জিএমজি।

আন্তর্জাতিক ছয়টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বোয়িং-৭৬৭ এবং এমডি ৮০ মডেলের কয়েকটি উড়োজাহাজ ছিল জিএমজির। আর দুটি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছিল তারা।

বিমান সংস্থাটির বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার থেকে কারসাজির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জিএমজির বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের জবাব খুঁজতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কোনো কর্মকর্তাকেই পাওয়া যায়নি। তাদের প্রায় সব কর্মকর্তাই বর্তমানে অন্য বিমান সংস্থাগুলোতে কর্মরত আছেন।