জেমকন গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- মেসার্স জেমকন লিমিটেড, মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন ও পাথর লিমিটেড।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাইম ব্যাংকের রাজধানীর সাত মসজিদ রোড শাখার একটি হিসাব ছাড়া বাকি সব হিসাব জব্দের নির্দেশ সম্প্রতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে জেমকন গ্রুপের প্রকৌশল বিভাগের এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বলেছে পঞ্চগড়ের কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট বিভাগ।
এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই বিদ্যুতের খুঁটি তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানগুলো পঞ্চগড়ে অবস্থিত।
জেমকন গ্রপের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ওই তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও তিনি।
চিঠিতে দেখা গেছে, এই তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট ও জরিমানা বাবদ সরকারের ৫৫ কোটি ২৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৯ টাকা পাওনা রয়েছে।
এর মধ্যে জেমকন লিমিটেডের কাছে বকেয়া ভ্যাট ও জরিমানা বাবদ পাওনা ২১ কোটি ৭৬ লাখ ১ হাজার ৫৯০ টাকা, ক্যাসল কনস্ট্রাকশনের কাছে পাওনা ২৬ কোটি ৩১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬৫ টাকা এবং পাথর লিমিটেডের কাছে পাওনা ৭ কোটি ২০ লাখ ৫৪ হাজার ১৪৪ টাকা।
পঞ্চগড় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি পাওনা আদায়ে বিধি মোতাবেক ব্যাংকগুলোকে হিসাব জব্দের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
মুল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৫৬ ধারা ও মুল্য সংযোজন কর বিধিমালার ৪৩ বিধি অনুযায়ী সরকারের পাওনা আদায়ে হিসাব জব্দ ও তা থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থ কেটে সরকারের হিসাবে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কাজী নাবিল বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি কোনো মন্তব্য না করে জেমকন গ্রুপের হেড অব ফাইন্যান্স জাকির আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জাকির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবেও সাড়ে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে আসছিলেন, ১৯৯৬ সালে ভ্যাট বিভাগ তাদের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দাবি করে।
তখন বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়ে ২০০২ সালে মামলায় জেমকনের পক্ষে রায় হয় বলে জানান তিনি।
“এরপর ভ্যাট কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত দেয় যে, যতদিন ঠিক না হবে যে আমরা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান (নির্মাণকারী না প্রস্তুতকারী) ততদিন সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। সেই হিসেবে আমরা ২০১১ সাল পর্যন্ত আমরা সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়েছি।”
এরপর ২০১১ সালে রাজস্ব বোর্ড এই তিন প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করে।
“সেই থেকে আমরা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিচ্ছি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের বকেয়া ভ্যাট কার থেকে আদায় করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না,” বলেন জাকির।
তিনি বলেন, “এখন ভ্যাট বিভাগ অযাচিতভাবে, অন্যায়ভাবে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভ্যাট দাবি করে তা আমাদের কাছে চাচ্ছে। এজন্য তারা আমাদের কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে।”
তবে রাজস্ব বোর্ডের ওই নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেছেন জানিয়ে জাকির বলেন, “এখন শুনানি চলছে। কোর্ট চূড়ান্তভাবে যে রায় দেবে, আমরা তা পরিপালন করব।”