দুঃখ প্রকাশ করে সময় চাইলেন ইউনাইটেড এয়ারের এমডি

বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের পর দুঃখ প্রকাশ করে গুছিয়ে ওঠার জন্য সময় চাইলেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিনুর আলম।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2014, 03:44 PM
Updated : 25 Sept 2014, 03:45 PM

যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পাশাশি পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধরারও আহ্বান জানিয়েছে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সন্ধ্যায় ইউনাইটেডের ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শাহিনুর আলম।

উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সাবেক চেয়ারম্যান তাসরিবুল আহমেদ চৌধুরীকে দায়ী করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এর জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন প্রধান নির্বাহী খুঁজছি। সিইও পেলে দ্রুততম সময়ে আবারও অপারেশন শুরু করব।”

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়াম্যান তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী গত সোমবার পদত্যাগ করলেও বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন মঙ্গলবার। ইউনাইটেড পর্ষদের  পাঁচ পরিচালকের মধ্যে তাসবিরই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যাবতীয় কার্যক্রম দেখভাল করে আসছিলেন।

তার পদত্যাগের পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় মোহাম্মদ মাহাতাবুর রহমানকে। আর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান শাহিনুর আলম।

কিন্তু নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাবসহ যাবতীয় বিষয় বুঝে উঠতে না পারায় বুধবার সন্ধ্যায় ইউনাইটেডের সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা আসে।

কর্মচারীদের পক্ষে এক  সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন এম ইলিয়াস বলেন, “ফ্লাইট পরিচালনা করতে যে খরচ হয় এই মুহূর্তে সেই খরচ নির্বাহের অর্থ ইউনাইটেডের নেই। এই অবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।”

এদিকে আগে থেকে না জানানোয় অনেকেই মালপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে এসে বিপাকে পড়েন। এ ধরনের ক্ষেত্রে টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা না পেয়ে তাদের অনেকেরই যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

শাহিনুর আলম বলেন, “যাত্রীদের যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সে জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা তাদের অনুরোধ করছি, আপনারা অন্য ফ্লাইটে চলে যান, আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সকলের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে।”

এ ধরনের পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে শাহিনুর বলেন, “গত ২২ সেপ্টেম্বর আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে একটি অ্যাকাউন্টের হিসাবের কথা ওঠায় সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী হঠাৎ পদত্যাগ করেন।”

তিনি বলেন, সাধারণত একজন চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করলে সব হিসাব ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যান। কিন্তু তাসবিরুল তার কিছুই করেননি।

“এমন কি কোম্পানির সিগনেটরি অথোরিটিও আমরা এখনো পাইনি। এ কারণে কোনো অ্যাকাউন্টস থেকে লেনদেনও করতে পারছি না।”

তাসবিরের পদত্যাগের পর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ফেরদৌস ইমামকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও চার ঘণ্টার মধ্যে তিনিও পদত্যাগ করেন বলে নতুন এমডি জানান।

“এভিয়েশন ব্যাবসায় বিনিয়োগ করলেও ইউনাইটেড নিয়ে কখনোই আমরা মাথা ঘামাইনি। আমরা তাসবির ভাইয়ের উপরই নির্ভর করতাম। তিনি পদত্যাগ করার পরে কোম্পানির মধ্য থেকেই একজনকে সিইও নিয়োগ দিয়েছিলাম। উনিও পদত্যাগ করায় আমরা মহা সমস্যায় পড়ে যাই।”

সবকিছু গুছিয়ে নিতে কয়েকদিন সময় চেয়ে শাহিনুর আলম বলেন, “ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।”

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শুরু থেকেই সঙ্গে আছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য লন্ডন প্রবাসী আহফাজ মিয়া। 

তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি আমাদের বিনিয়োগ দিয়েই শুরু হয়েছিল। এটা বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নাই। আমরা যদি কাল সিইও পাই আগামী সপ্তাহ থেকেই ফ্লাইট শুরু করে দেব।”

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টায় তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের বেতন-বোনাসসহ সকল পাওনা সময় মতো বুঝিয়ে দেব। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, কাউকেই চাকরিচ্যুত করা হবে না।”

এদিকে ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। এক দিনেই এ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ; বাজার মূলধন ৫১ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৬১৯কোটি টাকা।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আহফাজ মিয়া বলেন, “শেয়ার মার্কেটে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের বলতে চাই আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরুন। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সব ঠিক করে ফেলব।”

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়টি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ইউনাইটেডের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তপক্ষ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে যেহতু হঠাৎ করে চেয়ারম্যান ও এমডি পদত্যাগ করেছেন তাতে ইউনাইটেড সমস্যায় পড়েছেন।

“তাদের বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে অন্যরা এ ব্যবসার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। নতুন যারা এসেছেন এ ব্যবসা সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। এ কারণে তারা আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন।”

ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “তারা আমাদের কথা দিয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবে। আমার যেটা মনে হয়, এ অবস্থায় পাঁচ দিনের মধ্যে নতুন ম্যানেজমেন্ট দাঁড়াতেই পারবে না।”

এরপরেও পরিস্থিতি না বদলালে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হবে বলে জানান তিনি। 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০০৫ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে বিমান পরিচালনা করার লাইসেন্স দেয়। তার দুই বছর পর যাত্রী পরিবহন শুরু করে বিমান সংস্থাটি।

বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক দফা সময় বেঁধে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। তারপরও তা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দেয়া হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানটির মোট বকেয়া ৮৪ কোটি টাকা।

ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, কুয়ালা লামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কাঠমুন্ডু, কলকাতা এবং চট্টগ্রাম থেকে মাস্কাট ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী ও বরিশালেও রয়েছে ইউনাইটেডের ফ্লাইট, যদিও এর যাত্রী সেবার মান নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। 

ইউনাইটেডের বহরে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮, তিনটি এটিআর-৭২, পাঁচটি এমডি-৮৩ এবং দুটি এয়ারবাস-৩১০ সহ মোট ১১টি উড়োজাহাজ।