বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত বদল

শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদলেছে বিজিএমইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2013, 06:41 AM
Updated : 13 May 2013, 10:39 AM

সোমবার সকালে ওই শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভের পর তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সব কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়।

সংগঠনের এই সিদ্ধান্তে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিল্প মালিকদের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দেয়।

এরপর রাতে বিজিএমইএ মহাসচিব এহসান উল ফাত্তাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোলযোগপূর্ণ পোশাক কারখানাগুলো মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। 

বেতন-ভাতা বাড়ানো, কর্মস্থলে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার বিক্ষোভের পর আশুলিয়ায় শতাধিক পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষোভরত শ্রমিকরা প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা কয়েকটি কারখানায় ইট ছোড়ে এবং ভাংচুরের চেষ্টা চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ওই সময় পুলিশের লাঠিপেটায় কয়েকজন শ্রমিক আহতও হন।

এরপর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ, যেখানে সংগঠনের সভাপতি আশুলিয়ার সব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন।

ওই ঘোষণার পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারখানা মালিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাত্র চারটি ফ্যাক্টরি চলছে না। এই চার ফ্যাক্টরির সমস্যা না খুঁজে বিজিএমইএ কেন সব ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করলো, তা বোঝা যাচ্ছে না।”

এতে পোশাক মালিকরাই ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তিনি মনে করেন।

তার মতো আরো কয়েকজন শিল্প মালিকও অসন্তোষের কথা জানান। এরপর রাতে অন্য ঘোষণা আসে।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কেন হলো, তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আশুলিয়ায় সংগঠনভুক্ত ৩২০টি কারখানা রয়েছে। তবে দেশের মোট উৎপাদিত তৈরি পোশাকের ২০ শতাংশ এই এলাকা থেকে সরবরাহ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

“এই বন্ধ ব্যবস্থাটি হবে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ পদ্ধতিতে”।”

অর্থাৎ বন্ধ থাকার সময়ে আশুলিয়ার তিন শতাধিক কারখানার শ্রমিকরা কোনো বেতন পাবেন না।

তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক এবং রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।

গার্মেন্টকর্মীদের বেতন-ভাতা ও কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরূপ আলোচনার প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে রোববারই মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। এর একদিন বাদেই আশুলিয়ার এই ঘটনা ঘটলো।

শিল্প মালিকদের দাবি, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। 

আতিকুল ইসলাম বলেন, “স্বার্থান্বেষী একটি মহল তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। শ্রমিক নামধারী কিছু লোক শ্রম আইন বহির্ভূত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।”

কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ ও বিটিএমএ নেতারাও ছিলেন।

বিকেএমইএর সভাপতি কে এম সেলিম ওসমান শ্রমিক বিশৃঙ্খলার তদন্ত দাবি করে বলেন, তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা চান।

“একটা কালো হাত এখানে কাজ করছে। সবাই জানে, কারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। কারা হেফাজতে ইসলাম সৃষ্টি করছে। কে কে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে।”

সাভারে রানা প্লাজা ধসের পরে ওই এলাকার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কারখানা ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না বলে দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

“অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকরা এসে কার্ড পাঞ্চ করে বসে থাকছে অথবা চলে যাচ্ছে। আজকে একই ঘটনা মিরপুরেও ঘটেছে।”

আশুলিয়ার অরুনিমা স্পোর্টস ওয়্যারের মালিক সৈয়দ কামরুল হুদা বলেন, “আমার কারখানায় একেক সময় একেক ইস্যুতে অল্প কিছু সংখ্যক শ্রমিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেউ টিফিন থেয়ে অসুস্থ হচ্ছে, কেউবা পানি পান করে। অথচ একই খাবার অন্য শ্রমিকরা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে না।”

মিরপুরের এমবিএম কারখানার মালিক ওয়াসিম রহমান বলেন, “আমরা কারখানার সব শ্রমিক কাজ করতে চায়। কিন্তু ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অন্যদের কাজ করতে দিচ্ছে না।”

পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। রানা প্লাজায় ফাটল ধরার পরও মালিক পক্ষ কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলো বলে অভিযোগ শ্রমিকদের, যার কারণে এত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মো. জসিমউদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।