ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের পাশ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে নোরাড

দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্ষদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ যোগানোর পর নতুন করে এ ধরনের আর কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরওয়ের উন্নয়ন সংস্থা-নোরাড।

নুরুল ইসলাম হাসিব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2012, 11:42 PM
Updated : 26 June 2015, 09:06 PM

নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন এনআরকে মঙ্গলবার জানায়, দক্ষিণ সুদান ছাড়া আর কোনো দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে নোরাড সহায়তা দেবে না।

নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে এনআরকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্যবিরোধী কৌশল হিসেবে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকরিতা বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে নোরাড নজর দিচ্ছে।

“পদ্ধতিগত পুনর্মূল্যায়নসহ ক্ষুদ্রঋণে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নতুন গবেষণার বিষয়ে নোরাড বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রবণতার দিকে নোরাডের দৃষ্টি রয়েছে।”

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকার একটি কমিশন গঠনের এক মাসের মাথায় নোরাডের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা এলো।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে এনআরকে টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে নরওয়ে কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

নরওয়ে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া নোরাডের অর্থ ইউনূসের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের বিষয়েও প্রশ্ন ওঠে সে সময়। নোরাডের দেওয়া ১০ লাখ ডলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে চুক্তি মানতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করে সে সময় বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেন নরওয়ের তখনকার রাষ্ট্রদূত।

পরে ইউনূস অসলোতে গিয়ে আলোচনা করলে দুই পক্ষের মধ্যে একটি ‘সমঝোতা’ হয়, যদিও ওই ব্যাপারে আর বিস্তারিত জানায়নি কোনো পক্ষই।

এনআরকে টেলিভিশনে ওই প্রতিবেদন প্রচারের পর গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকা- পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক ও সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে নানা অসঙ্গতির তথ্য উঠে আসে ওই কমিটির প্রতিবেদনে।

এরই মধ্যে অনুমোদন না নিয়ে পদে থাকার কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়। এর বিরুদ্ধে ইউনূস উচ্চ আদালতে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

এরপর চলতি বছর ১৬ মে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে, যাকে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা, প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আইনি কাঠামো এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকা- পর্যালোচনাসব বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার এনআরকে টেলিভিশনের প্রতিবেদনে সে দেশের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্রন্ড ভিকেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের কার্যকরিতা নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে নোরাড নজর দিচ্ছে। ঋণ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা, সম্ভাব্য ঋণ নিবন্ধক, জাতীয় পর্যায়ে এ খাতের জন্য বিধিমালা তৈরি এবং এ খাতের মুক্ততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নতুন পদ্ধতির প্রবর্তনসহ বর্তমানে চলমান সমস্ত আলোচনার বিষয়েই নোরাড অবগত আছে।

নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নোরাডের অর্থায়ন নিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব যোগাযোগের তত্ত্বাবধান করে । এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার অনুমোদন নেই নোরাডের।

এনআরকের প্রতিবেদনে বলা হয়, “অনেক প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে নিজেরাই টাকা বানাচ্ছে। তাদের ব্যবস্থাপনার জন্য আর সরকারি তহবিলের প্রয়োজন নেই।”

গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল স্থানান্তরের বিষয়ে সেই সময়ে নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এরিক সোলহেইমের মুখ না খোলার বিষয়টিও উঠে এসেছে এরআরকের মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনটি বলেছে, নোবেল বিজয়ী ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে নোরাডের সম্পর্ক ও ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এনআরকের পক্ষ থেকে এরিক সোলহেইমের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।