কেন- প্রশ্ন করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না, গত কাল থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থা্কছে না। গরমের মধ্যে এই এক ঘণ্টা দোকানে বসে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে। তাই আজকে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি।”
মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতিতে যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তার আঁচে ব্যয় সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় দেশে লোড শেডিংও ফিরেছে।
তাই প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে ছুটছেন দোকানে। সেই দলেই ছিলেন জাহাঙ্গীর।
তার মতোই কাপ্তানবাজারে গিয়েছিলেন পুরান ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যুতের সমস্যা তো শুরু হয়েছে, ঘরের শিশু ও বৃদ্ধদের ঘুমের সমস্যা হয়। গরম থেকে বাঁচতে তাই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। আবার বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তাদের পড়ায় যেন সমস্যা না হয় তাই ফ্যানের সঙ্গে চার্জার লাইটও কিনে নিয়েছি।”
বুধবার গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, কাপ্তান বাজারের এরশাদ মার্কেট ও নবাবপুর রোডের বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটে ঘুরে বেশ ভিড় দেখা যায়। আর বেশিরভাগ ক্রেতাই ছিলেন রিচার্জেবল লাইট ও ফ্যানের।
এই ক্রেতাদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগে দোকানিরা দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, ফ্যানের দাম ৮০০-১৫০০ এবং লাইট কিনতে ২০-৩০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।
পল্টনের মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর নবাবপুর রোডে যাওয়ার আগে গিয়েছিলেন বায়তুল মোকাররম মার্কেটে।
তিনি বলেন, “সেখানে দাম অনেক বেশি। পরে কাপ্তান বাজারের এরশাদ মার্কেটে গেলাম। সেখানে ফ্যানের দাম চেয়েছে ৬ হাজার, তাই এখানে (নবাবপুর রোডে) আসছি।”
তিন মার্কেট ঘুরে ৪ হাজার ৯০০ টাকায় একটি রিচার্জেবল ফ্যান কেনেন তিনি।
যেখান থেকে জাহাঙ্গীর ফ্যানটি কিনেছেন, সেই দোকানি আব্দুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার্জার ফ্যানের দাম অন্তত ৮ থেকে ১৫শ টাকা বেড়েছে।”
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আব্দুর রহমান কম দামে রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে সুত্রাপুর থেকে গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে দাম বেশি দেখে ঢুঁ মারেন কাপ্তান বাজারে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার্জার ফ্যানের দাম ওখানে অনেক বেশি, তাই কাপ্তান বাজারে এসেছি।”
তবে বাড়তি দামেই বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে ফ্যান ও লাইট কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় ছোট বাচ্চা, লাইট-ফ্যান না থাকলে তো সমস্যা। দাম কিছুটা বাড়লেও ফ্যানটা অন্তত কিনতে হবে।”
বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের হকার মো. রাকিব বলেন, “দুই দিন ধরে ফ্যানের চাহিদা অনেক বেশি। আমাদের এখানে বেশিরভাগই ছোট ফ্যান। প্রতি ফ্যানে পিছনে অন্তত ৪-৫শ টাকা বেড়েছে।”
তবে লাইটের দাম তেমন বাড়েনি বলে জানান তিনি।
নবাবপুর রোডের পাইকারি মার্কেটের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা বলেন, “চার্জার ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আমাদের কাছে এখন আর ফ্যান নেই। যা ছিল গত দুই দিনে বিক্রি হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, তারা বছরের শুরুতে আমদানি করেছিলেন। তখন বুঝতে পারেননি যে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি হবে, ফ্যানের চাহিদা বাড়বে।
নবাবপুর রোডের সামস ইলেকট্রিক মার্কেটের রায়হান ইলেকট্রিকের মালিক মো. আবু রায়হানও বলেন, তাদের আমদানি করা রিচার্জেবল ফ্যানও শেষ।
চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সঙ্কট পড়েছে বিষয়টা, তা না, অনেকের কাছে আছে, অনেক ব্যবসায়ী চার্জার ফ্যান ইমপোর্ট করে। চাহিদা বেশি থাকলে দাম তো একটু বাড়বেই।”
পাইকারি দোকানে ফ্যান কিনতে আসা মোহাম্মদপুরের সালমা ইলেকট্রনিক্সের মালিক আব্দুল কাদির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার দোকানে যা ছিল, সব বিক্রি হয়ে গেছে, তাই কিছু ফ্যান নিতে এসেছি। কিন্তু দাম অত্যাধিক বেশি। বেশি দামে কিনলে বৃষ্টি আসলে আবার বিক্রি করা যায় না। বাজার দেখছি, কিছু হয়ত কিনে নিয়ে যাব।”
প্রতিটি রিচার্জেবল ফ্যানের বাড়তি দাম নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নবাবপুর রোডের মোজাম্মেল মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা খান ট্রেডিং হাউসের মালিক কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রিচার্জেবল ফ্যানের দাম বেশি রাখায় মঙ্গলবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটে অভিযান চালিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তর জরিমানা করে কয়েকটি দোকানকে।